বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২

কুচিয়া মাছ চাষ পদ্ধতি

 

সাপের মত দেখতে হলেও কুচিয়া এক প্রকার মাছ। আমাদের দেশে সর্ব সাধারণের কাছে জনপ্রিয় না হলেও আর্ন্তজাতিক বাজারে কুচিয়া মাছের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। কুচিয়া মাছ চাষ পদ্ধতি জানা না থাকার কারনে বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করা হয় নাই। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলাতে বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

কুচিয়া মাছ বাংলায় যেমন- নানা (কুইচ্চা, কুঁচে, কুচো) নামে পরিচিত আছে। তেমনি ইংরেজিতে বিভিন্ন নামে পরিচিত। আমাদের দেশে খাল-বিল, পচা পুকুর, হঁওড়-বাওড়, ধানক্ষেত এবং বন্যাপ্লাবিত অন্চলে কুচিয়া পাওয়া যায়। আমাদের দেশে অনেকেই খাদ্য হিসাবে যেমন কিছু কিছু উপজাতীয় জন গোষ্ঠীর কাছে খুব জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কুচিয়া মাছকে অস্পৃর্শ মনে করে।

আমাদের দেশে সর্বসাধারনের কাছে জনপ্রিয় না হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে কুচিয়া মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে এ মাছের বাণিজ্যিক মূল্য অনেক। রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ মাছ হিসাবে কৃষকদের দিনদিন কুচিয়া মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। সঠিক পদ্ধতিতে কিভাবে চাষ করবেন কুচিয়া সে বিয়য়ে যেন আপনি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে পারেন তার জন্য বিস্তারি আলোচনা করেছি।

কুচিয়া মাছ চাষের মাধ্যমে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে কুচিয়া মাছ চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু সেটা অতি সামান্য, তাছাড়া প্রকৃতি থেকে বিপুল পরিমানে কুচিয়া আহরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেমন জরুরী, তেমনি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা তার থেকে বেশী জরুরী।

প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক রেখে অধিক বৈদাশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে এখনই বানিজ্যিকভাবে কুচিয়া মাছ চাষ পদ্ধতির  প্রচলন করা খুবই জরুরী । এক দিকে যেমন প্রকৃরি ভার সাম্য রক্ষা হবে, তেমনিভাবে কুচিয়া মাছ চাষ করে বিপুল পরিমানে বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্বভ হবে।

কুচিয়া মাছ চাষের সঠিক পদ্ধতি বা নিয়ম

কিভাবে করবেন পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুত

কুচিয়া মাছ মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত গর্ত করে এক পুকুর থেকে অন্য পুকুরে চলে যায়। তাই নিদিষ্ট পুকুরে কুচিয়া রাখার জন্য পুকুরের তলদেশ ও চারপাশে পাকা করা সম্ভব হলে ভালো তা না হলে রেক্সিন বা মোটা পলিথিন অথবা ট্টিপল দিয়ে পুকুরের তলদেশও চারপাশ ঢেকে দেওয়া উত্তম। পুকুরের তলদেশ ঢেকে দেওয়ার পর ২ থেকে ৩ ফিট মাটি দিয়ে দিতে হবে। পুকুরের একপাশে কম্পোস্টের স্তুপ করে রাখতে হবে।

অথবা ১ ইন্চি পরিমানে সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে কচুরি পানা দিতে হবে। যখন কুচিয়ার প্রজনন মৌসুম সে সময়ে পুকুরে কচুরি পানা তিন চতুর্থাংশ দিতে হবে। কুচিয়া মাছ কম গভীরতা সম্পন্ন পুকুরে বা বিলে পাওয়া যায় তাই তাদের অনুকুল পরিবেশ তৈরি করতে হবে প্রজনন কালে পানির গভিরতা ১ ফুট পর্যন্ত রাখতে হবে।

কুচিয়া মাছের পরির্চযা

কুচিয়া মাচ সংগ্রহের জটিলতার কারণে মুখে আঘাত পেয়ে থাকে । তাছাড়া দীর্ঘ দিন অধিক ঘনত্ব ড্রামে বা চৌবাচ্চায় থাকার কারণে পেটের নিচে ছোপ ছোপ রক্ত জমাট বাধা দেখা যায়। আঘাত পাপ্ত কুচিয়া মাছ আলাদা করে আঘাতের পরিমাণ বিবেচনা করে ০.২-০.৫ মি লি এন্টিবায়োটিক ও রেনামাইসিন প্রয়োগ করতে হবে।

কুচিয়া মাছের খাদ্য ব্যবস্থা

কুচিয়া মাছকে খাদ্য হিসাবে- জিবিত ছোট মাছ ও শামুক-ঝিনুক সরবরাহ করতে হবে। কুচিযা নিশাচর প্রাণী তাই প্রতিদিন নিদিস্ট সময়ে খাদ্য দিতে হবে এবং এর সাথে সম্পুরক খাদ্য দিতে হবে।

কুচিয়া মাছ সংগ্রহ

কুচিয়া মাছ পালনের জন্য ফ্রেবুয়ারী থেকে মার্চ মাসের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। কুচিয়া মাছ সংগ্রহের পর তাকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পুকুরে  বা হ্যাচারিতে রেখে ৫-৭ দিন পরিচর্যা করতে হবে।

প্রজননের জন্য কুচিয়া মজুদ

প্রজননের জন্য সুস্থ্য সবল কুচিয়া স্ত্রী ও পুরুষ শনাক্ত করার পর ১৫০-২০০ গ্রাম ওজনের পুরুষ ও ২৫০-৩৫০ গ্রাম ওজনের স্ত্রী কুচিয়া মাছকে প্রস্তুতকৃত পুকুরে ১:২ অনুপাতে শতাংশে ৩০টি  করে মাছ মজুদ রাখতে হবে।

কুচিয়া মাছের বৈশিষ্ট

  • সাপের মতো দেখতে হলেও কুচিয়া একটি মাছ।
  • কুচিয়া মাছের ফুলকা থাকেনা, তবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মাথার দুই পাশে থলে আকৃতির অঙ্গ আছে।
  • এ মাছের শরীর লম্বা বেলুনাকৃতির হয়, এবং স্লাইম নিঃরিত হয় তাই শরীর পিচ্ছিল হয়।
  • এরা সামনে ও পেছনে দুই দিকেই চলাচল করতে পারে।
  • দেখে কুচিয়া মাছকে আশ বিহীন মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে এদের গায়ের চামড়ার নিচে ক্ষুদ্রকৃতির আঁশ বিদ্যমান।
  • কুচিয়া, যে কোন প্রতিকুল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।
  • কুচিয়া স্বপ্লমাত্রার অক্সিজেন ও উচ্চ তাপমাত্রা সয্য করতে পারে।
  • স্বপ্ল ও গভির জলাশয়ে এরা সহজেই বসবাস করতে পারে।
  • কুচিয়া অধিক শক্তিশালী এবং ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির মাছ।
  • কুচিয়া মাটিতে গর্ত করে ও জলজ আর্বজনার নিচে লুকিয়ে থাকে, অর্থাৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ পছন্দ করে।
  • কুচিয়া রাক্ষুসে স্বভাবের ও নিশাচর প্রাণী।
  • কুচিয়া ছোট ছোট মাছ, পোকামাকড় ও শামুক-ঝিনুক খেয়ে জীবন ধারণ করে।

কুচিয়া মাছের প্রজনন বৈশিষ্ট

কুচিয়া মাছ বছরে একবার মাত্র প্রজনন করে থাকে। কুচিয়া মাছ লিঙ্গ পরিবর্তন করতে সক্ষম তাই  বাহ্যিক বর্ণের উপর ভিত্তি করে পুরুষ ও স্ত্রী কুচিয়া মাছকে আলাদা করা সম্ভব না । প্রজননের সময় স্ত্রী  কুচিয়া মাছের গায়ের রং হলুদ হয়ে থাকে আর পুরুষ কুচিয়া মাছের গায়ের রং কালো বর্ণের হয়ে থাকে।

প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী কুচিয়া মাছের জননাঙ্গ কিছুটা স্ফিত হয় এবং পেটে ডিম থাকার কারনে পেটের দিকে যথেষ্ট ফোলা থাকে। স্ত্রী কুচিয়া মাছ থেকে পুরুষ কুচিয়া মাছ সাইজে ছোট হয়ে থাকে। একটি পরিপক্ক কুচিয়ার ওজন হয় ২০০-৪০০গ্রাম এবং গড়ে ২৫০ থেকে ৬৫০ টি ডিম দিয়ে থাকে।

ডিম দেওয়ার সময় হলে কুচিয়া মাটিতে আকাবাকা  গর্ত করে থাকে। কুচিয়া এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে। কুচিয়া মাছ নিজেদের তৈরি গর্তে ডিম দেয় এবং সেখান থেকেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

সে সময়ে মা কুচিয়া ডিমের খুব কাছাকাছি থেকে ডিম পাহারা দেয় এবং পুরুষ কুচিয়া আশেপাশে ঘোরা ফেরা করে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়া থেকে শুরু করে ডিম্বথলি নিঃশোষিত না হওয়া পর্যন্ত মা কুচিয়া মাছ শত্রুর হাত থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করে থাকে।

কুচিয়া মাছের ঔষধি গুন

আমাদের দেশে যে সকল উপজাতিরা আছে , সে সকল উপজাতি জনগোষ্টির মাঝে এ মাছ ব্যাপক জনপ্রিয়। তারা বিশ্বাস করে এ মাছ খেলে শারীরিক দুর্বলতা অ্যাজমা, রক্তক্ষরণ রক্তশূন্যতা ইত্যাদি রোগ-সমুহ থেকে  সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। তাদের ধারনা কুচিয়া মাছের বায়ু-থলি তাজা বা শুকনা অবস্থায় খেলে অ্যাজমা ও বাতজ্বর বাড়ে না।

কুচিয়া মাছের মাংসের সুপ বা বিবিন্ন ধরনের হাবস মিশিয়ে তরকারী রান্না করে খেলে পাইলস, এ্যামেনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ সেরে যায়। অনেক গবেষণায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে উপজাতিদের বিশ্বাসের সঙ্গে সহমত পোষন করে।

কুচিয়া মাছের পুষ্টিমান

পুষ্টির দিক দিয়ে কুচিয়া মাছে অন্য মাছের চেয়ে তুলনায় বেশি খাবার যোগ্য। প্রতি ১০০ গ্রাম কুচিয়া মাছে ১৮.৭ গ্রাম প্রোটিন, ০.৮ গ্রাম চর্বি, ২.৪ গ্রাম কার্বহাইড্রেট, ১৪০০ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন, ১৮৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। তাছাড়া ১০০ গ্রাম কুচিয়া মাছে ৩০০ কিলোক্যালরির বেশি শক্তির জোগান দিতে পারে।

শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১

Venami shrimp farming started for the first time in the Bangladesh

 Experimental farming of Venami variety of shrimp has started for the first time in Bangladesh. In September 2019, the government allowed private companies Sushilan and MUC Foods to experimentally cultivate Venami in response to demands from traders and exporters for being profitable. On Thursday (April 1), experimental farming of Venami shrimp, known as White Gold, started at Paikgachha in Khulna.







It is learned that 1 million Venami shrimps have been imported from Thailand and taken to Paikgachha upazila of Khulna. From there it has been taken to the laboratory of Bangladesh Fisheries Research Institute and Bagerhat Shrimp Research Center for testing. After the test, the saltwater of the pike tree will be released into the pond of the research center. Pabitra Kumar, senior fisheries officer of Paikgachha upazila, said, “The government has given permission to a private company to cultivate Venami on an experimental basis. We are helping them in this work. Paikgacha saltwater is being cultivated at the research center so that there is no harm to the environment. Benami shrimp will be cultivated experimentally first in one pond and then in four ponds. 'In this context, the chief executive of Sushilan Mostafa Nuruzzaman said, 'We have prepared six ponds for the experimental cultivation of Venami. However, due to heavy rainfall last season, the water in the pond did not have the required salinity. That is why we are lagging behind in the process of importing pona. Anyway, this time Venami shrimp fry has been brought from Thailand. We have started the process of cultivation. '

He said, 'There is no alternative to wemani farming to increase the export income of shrimp. I don't think it will have any effect on the environment. '

According to the Bangladesh Frozen Food Exporters Association, shrimp is cultivated in about three and a quarter lakh hectares of land in the country. However, along with exports, shrimp production has also declined day by day. For example, in the last 2013-14 financial year, 34 thousand 733 metric tons of bagda and 6 thousand 503 metric tons of lobster were produced. In the last 2018-19 financial year, the production of bagged shrimp has come down to 24, 398 metric tons. And lobster production has decreased to 5, 146 metric tons.

On the other hand, frozen shrimp exports were valued at ৫ 550 million in the 2013-14 financial year, which dropped to ৫ 510 million in the next fiscal year. Shrimp exports have been steadily declining for the next four fiscal years. In the last fiscal year 2018-19, the export of frozen shrimp was only ৩ 330 million.

Kazi Belayet Hossain, president of the Bangladesh Frozen Food Exporters Association (BFFEA), said: Many countries are earning thousands of crores of rupees by cultivating it. If Venami farming is successful in this region, shrimp will play a significant role in the development of the country's economy. '

It is known that Venami shrimp was first introduced in the United States in 1970. Commercial cultivation of this species started in the 1980s. Since then, extensive cultivation has started in many Asian countries like China, Thailand, Indonesia and India.

Simarak, the top food processing company in the United Kingdom, has invested in Bangladesh to improve the fisheries sector. They set up a seafood processing plant in Chittagong in November 2000 and were inaugurated by British Princess Ann Seti.

At one time, Semark became the leading company in the production and export of seafood in Bangladesh. They also won various awards for their success in exporting Black Tiger and Freshwater Shrimp.

With the arrival of a new species of white shrimp called Venami, the demand for Black Tiger has been declining for the last 10 years.

In 2012, the total income of Bangladesh by exporting Black Tiger and freshwater shrimp was 590 million US dollars. On the other hand, the total income in 2019 is 365 million US dollars. During this period, 85% of the shrimp factories have been shut down due to high debt or production has stopped.

Meanwhile, neighboring countries India, Vietnam, Indonesia and China have been cultivating Venami for the last 15 years. They are exporting these shrimps to the United States, Europe, Russia, Africa, Japan, Australia and several countries in the Middle East. The annual market value of Venami shrimp is বিল 60 billion worldwide.

Despite much discussion, it was too late to start the cultivation of Venami in Bangladesh due to bureaucratic complications and lack of proper leadership.

শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১

মাছ চাষের জন্য পুকুরে চুন প্রয়োগ

 

মাছ চাষের পুকুরে চুন প্রয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাছ চাষে মাছের যত্নে পুকুরে সঠিক সময়ে পরিমাণমতো চুন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়ে থাকে। ​পানির পি.এইচ. বৃদ্ধির জন্য মাছ চাষের পুকুরে   চুন প্রয়োগ এবং চুন কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

পুকুরে  চুন প্রয়োগ 

পুকুরে চাষ চলাকালে পানির পি. এইচ. ৭ বা তা থেকে কমে গেলে পি.এইচ বৃদ্ধির জন্য চুন প্রয়োগ করতে হয়। পাথুরে চুন( ক্যালসিয়াম কার্বোনেট,CaCO3, ১০-১৫/একর), পোড়া চুন( CaO, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, ১০-১৫ কেজি/একর), নির্মাণ কাজের চুন( ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড, Ca(OH2), ২০-২৫ কেজি/একর) এবং ডলোমাইট CaMg(CO3)2, ২০-৩০ কেজি/ একর) ব্যবহার করলে পানির পি. এইচ. বাড়বে। এখানে উল্লেখ্য যে, চুন প্রয়োগের ১ দিন পর পি.এইচ সঠিক পর্যায়ে না আসলে পুনঃ একটা নিজস্ব নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। এখন কথা হল কোন চুন ব্যবহার উত্তম?

 চুন কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে:

পাথুরে চুন

এ চুন ব্যবহারই উত্তম। ইহা ধীরে ধীরে পানির পি.এইচ বাড়ায় এবং স্থির রাখে। এ চুন পরিমাণে কিছু বেশী ব্যবহার করলেও কোন সমস্যা হয় না। তাই মাছ চাষিদের উচিত এটা ব্যবহার করা

নির্মাণ কাজের চুন

এ চুন হঠাৎ পানির পি. এইচ বাড়িয়ে ফেলে এবং তা অধিক সময় স্থির থাকে না। নির্মাণ কাজের চুন হঠাৎ পি.এইচ বাড়িয়ে ফেলে বিধায় তা বিকাল বেলা ব্যবহার অনুচিত। মাছ চাষের জন্য এটা না ব্যবহার করায় উত্তম।



                                                 ডাবল স্পীড এয়ারেটর-Double Speed Aerator
 Price
 ৳ 54,500.00
যোগাযোগ করুন: ০১৩০৩৬৬৩১৮৬



                                                  ৬ পাখা এয়ারেটর – 6 Paddle Wheel Aerator
 Price
 48,900.00

                                         যোগাযোগ করুন: ০১৩০৩৬৬৩১৮৬



ডলোমাইট

ইহা ক্যালসিয়াম- ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ চুন। এ চুন ব্যবহার করা হলে পানির পি. এইচ, নিরপেক্ষতা ক্ষমতা ও ম্যাগনেসিয়াম বাড়ে। এ চুন ধীরে ধীরে পি.এইচ বাড়ায় এবং তা স্থির রাখে। এ চুন হল সর্বাধিক উত্তম চুন। তবে এ চুনের দাম বেশী হলে পাথুরে চুন ব্যবহার করাই শ্রেয়।

মন্তব্য

  • কম মাত্রায় চুন প্রয়োগ করে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে নিজে নিজে সঠিক মাত্রা নির্ধারণ একটি উত্তম পন্থা।
  • পুকুরে পানির পরিমান ৪ ফুট থেকে কম-বেশীর সাথে উল্লেখিত মাত্রা পরিবর্তনশীল হবে।




লেখক....

মহসিন আলম সুপ্ত
ব্যবস্থাপনা পরিচালক 
সালেহা মহসিন এগ্রো এন্ড ফিসারিজ লি.







গলদা চিংড়ির নমুনা পর্যবেক্ষণ

 গলদা চিংড়ির নমুনা পর্যবেক্ষণ করন:

নমুনা পর্যবেক্ষণ কি ?
একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর  গলদা চিংড়ির বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ইত্যাদি পরীক্ষা করার জন্য নমুনা হিসেবে কয়েকটি চিংড়ি ধরে  দেখাই হচ্ছে নমুনা পর্যবেক্ষণ।

নমুনা পর্যবেক্ষণ কেন করা প্রয়োজন ?
১. শারীরিক বৃদ্ধি হচ্ছে কি-না তার জন্য নমুনা পর্যবেক্ষণ করা অতীব জরুরী।
২. চিংড়ি রোগাক্রান্ত হচ্ছে কি-না তা দেখার নমুনা পর্যবেক্ষণ।
৩. খাবার প্রায়োগের জন্য নমুনা পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।

নমুনা পর্যবেক্ষণ কিভাবে করা যায় ?
১. ১৫ দিন পর পর ঝাঁকি জাল দিয়ে ৮-১০টি চিংড়ি ধরতে হবে।
২. চিংড়িগুলোকে একত্র করে ওজন নিয়ে গড় ওজন বের করতে হবে এবং তা লিখে রাখতে হবে।
৩. পরবর্তী ১৫ দিন পর ওজন নিয়ে আগের ওজনের পার্থক্য দেখে ওজন বৃদ্ধি পরীক্ষা করতে হবে।
৪. নমুনায়িত চিংড়ি-গুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। চিংড়ির এন্টেনা (দাঁড়ি গোঁফ), রোষ্ট্রেম (করাত), লেজ, ফুলকা এবং সাতার পাঁ অঞ্চল ভালোভাবে দেখতে হবে। এসব স্থানে কালো হয়ে যাচ্ছে কিনা বা দাঁড়ি গোঁফ পচন ধরছে কিনা ইত্যাদি দেখতে হবে।
এভাবে ১৫ দিন অন্তর অন্তর নমুনা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 ক্লিক করুন




শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১

গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি- গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি

 গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি- গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি



গলদা চিংড়ি মিষ্টি পানিতে এবং হালকা লবণ পানিতে ভালভাবে চাষ করা যায়। গলদা চিংড়ি বাংলাদেশে এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে দ্রুত বর্ধনশীল মিঠা পানির চিংড়ি। প্রাকৃতিক পরিবেশে, গলদা চিংড়ি মিষ্টি পানিতে এবং সামান্য লবণাক্ত পানিতে পাওয়া যায়। যাইহোক, তারা নদীর উঁচু অঞ্চলে থাকতে পছন্দ করে যেখানে জোয়ার পরিবর্তিত হয়। আমাদের দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।


বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ির উৎপাদন একর প্রতি 1200 থেকে 2500 কেজি বেড়েছে। আমাদের দেশে গুটিকয়েক কৃষক ছাড়া আধুনিক গলদা চিংড়ি চাষ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়নি।



গলদা চিংড়ি ভূমিকা:


স্বাদু পানির চিংড়িকে চিংড়ি বলা হয়। গলদা চিংড়ি পৃথিবীতে জায়ান্ট ফ্রেশ ওয়াটার প্রন নামে পরিচিত। গলদা চিংড়ির বৈজ্ঞানিক নাম: ম্যাক্রোব্রাচিয়াম রোজেনবার্গ। গলদা চিংড়িগুলি অমেরুদণ্ডী প্রাণী, ঠান্ডা রক্তের, শেলফিশ নিশাচর সর্বভুক। প্রতিবার শেল পরিবর্তনের সাথে সাথে গলদা চিংড়ি শারীরিকভাবে বৃদ্ধি পায়। গলদা চিংড়ি হজমযোগ্য জৈব পদার্থ, প্রাণী, উদ্ভিদ কণা (ডায়াটম, কোপপড, ক্রাস্টেসিয়ান) ইত্যাদি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। পুরুষের পিত্তথলি স্ত্রী পিত্তথলির তুলনায় অপেক্ষাকৃত বড় এবং দ্রুত বর্ধনশীল। নরমাংসবাদ বিদ্যমান। অতএব, খোলস পরিবর্তনের সময় পর্যন্ত যদি কোন খাবার না থাকে, তবে শক্তিশালী চিংড়ি যখনই সুযোগ পায় নরম চিংড়ি খায়।

গলদা চিংড়ির উপকারিতা:


গলদা চিংড়ির দ্রুত বিকাশ ঘটে।

খাবারের খরচ কমতে থাকে;

বাজারে প্রচুর প্রয়োজন;

বৈদেশিক বাণিজ্য সম্ভাবনার কারণে খরচ বেশি হতে থাকে;

অতিরিক্ত কার্পের পাশাপাশি ধান এলাকায়ও বন্দী-উত্থাপিত হতে পারে;

মিঠা পানির মধ্যে জন্মানোর পাশাপাশি লবণাক্ত পানীয় জলের (5 ppt এর নিচে লবণাক্ততা) হ্রাস করা যেতে পারে।

একাকী পাশাপাশি সম্মিলিত ফসল (কার্প-রুই, কাতলা, মৃগেল সহ) অর্জন করা যায়।

রেনু পোনা বা এমনকি PL জৈব সম্পদের পাশাপাশি হ্যাচারির মাধ্যমে পাওয়া যায়।

সর্বভুক প্রাণী, খাদ্যতালিকাগত সম্পূরকগুলি খুব সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে কারণ খাবার।

অতিরিক্ত প্রস্তুতিমূলক খাদ্য উপাদান খুব সহজেই সংগ্রহ করা যেতে পারে।

প্রস্তুত খাবারের পাশাপাশি, অপ্রচলিত খাবারের জন্য যেমন ডাল, ভুট্টা, টেটার, গোটা গম ইত্যাদি। সরবরাহ করা যেতে পারে কারণ খাবার;

একটি ছোট চিকিত্সা করা চাষ অসুস্থতার সাথে সম্পর্কিত প্রকৃত ঘটনা হ্রাস করে, যা অন্যান্য পরামর্শের সাথে ওষুধের সাথে সস্তা যুক্ত হয়।

বিক্রয় মূল্য, প্রয়োজন আসলে বেশি এবং শেষ পর্যন্ত খুব সহজেই দেওয়া হতে পারে।


গলদা চিংড়ি কাটার কৌশল:


আমাদের জাতির মধ্যে, গলদা চিংড়িগুলি প্রায়শই 2 টি পদ্ধতির মধ্যে বন্দী-উত্থাপিত হয়:


1. নির্জন চাষ কৌশল: দুই। সম্মিলিত চাষ কৌশল:

নির্জন চাষ কৌশল:


নির্জন গলদা চিংড়ি ফসল কাটা। সাধারণত 100-110 ভাজা নির্জন ফসল কৌশলের মধ্যে প্রতি শত বছর ধরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এই বিশেষ রেশন দিয়ে যদি আপনার পুরোপুরি পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি সংগঠিত করা যায়, তাহলে প্রতি শত বছর 200-300 ভাজা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। নির্জন চাষ পদ্ধতির মধ্যে প্রতিটি একরের প্রকৃত ডেলিভারি আসলে 400-500 কেজি।

সম্মিলিত চাষ কৌশল:


রুই, কাতলা, ধাতব মুগের পাশাপাশি বিগহেড সামুদ্রিক খাবারের প্রবণতা এই প্রযুক্তির সাহায্যে গলদা চিংড়ির সাথে জন্মে। সম্মিলিত ফসল তোলার কর্মসূচির মধ্যে 60-70 গলদা চিংড়ি এবং 3-4 কার্প ফ্রাই প্রতি শত বছর ধরে ভরা থাকে। যেহেতু চিংড়ি অত্যন্ত ব্যয়বহুল সামুদ্রিক খাবার এবং তাদের নিজস্ব খাবার অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তাই সামুদ্রিক খাবারের সাথে যুক্ত যৌথ জীবনধারা সরবরাহ করা সবচেয়ে ভাল, যার বাজার মূল্য বেশি। এই ক্ষেত্রে রুই এবং কাতলা সামুদ্রিক খাবারের সাথে যুক্ত 400-500 গ্রাম প্রদান করা ভাল। এই ধরনের 3-3 সম্পর্কিত বিবেচনা করতে পারে। চিংড়ি নির্বাচনের সময় 5 কেজি। একত্রিত ফসল তোলার মধ্যে, চিংড়ির সাথে একেবারে কোন সামুদ্রিক খাবার সরবরাহ করা যাবে না যা প্রকৃত চিংড়ি এবং সেইসাথে বাজারের মূল্য হ্রাস করেছে। প্রতিটি একরের জন্য উৎপাদন আসলে চিংড়ির সাথে 200-300 কেজি এবং কার্পের সাথে 2000-2500 কেজি যুক্ত।

গলদা চিংড়ি পরাগের সাথে যুক্ত চালান:


জালাদারকে জৈব সরবরাহের মতো স্রোতের পাশাপাশি মোহনার মাধ্যমে সংগ্রহ করা যেতে পারে। উপরন্তু, হ্যাচারিতে উত্পাদিত গালদার রেনুও পাওয়া যায়। প্রথম রেনু চৈত্র-বৈশাখের মধ্যে মার্চ-এপ্রিল মাসে আসবে এবং সেইসাথে গলদা রেণু 12 মাস থেকে শেষ করার জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আসবে। আমার জন্য, জৈব সম্পদ থেকে চিংড়ি পরাগের ক্যালিবার আসলে দুর্দান্ত।

চিংড়ি পিএল লার্ভা মেডিকেল প্রকাশ করুন:


পিএলকে আমরা যে সময়কাল থেকে শুরুতে প্রস্থান করতে হবে। এ। বৈশাখের সাথে সম্পর্কিত 30 দিন থেকে শুরুতে। এর পরে যতদিন এটি শেষ হয়ে গেছে, মহিলা চিংড়ির পরিমাণ যেমন বেশি হতে পারে তেমনি ছেলেদের পরিমাণও অনেক কম হতে চলেছে। প্রকৃত ডেলিভারি আসলে হ্রাস পায় কারণ মহিলা চিংড়ি আসলে মাত্রা কম। পিএল ছাড়ার পর প্রথম 20-25 বারের মধ্যে প্রাকৃতিক পাউডার ম্যাচ সরবরাহ করা উচিত। শুরুতে প্রাকৃতিক পাউডারের সাথে যুক্ত 10 জিআর দয়া করে প্রতি 1000 এর জন্য খাদ্য সরবরাহ করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক পাউডারের পরিমাণ উন্নত করুন। তারপরে আপনাকে সামান্য মাত্রার মধ্যে খাবার দেওয়ার জন্য পেলেট সরবরাহ শুরু করতে হবে।


প্রথম অবস্থার মধ্যেই, প্রকৃত চিংড়ির ডিনারে 30-40% প্রোটিন থাকা উচিত: বড় চিংড়ির ক্ষেত্রে, এই ডায়েটে 28-30% প্রোটিন থাকা উচিত। চিংড়ি পরাগ PL এর সাথে যুক্ত প্রকৃত সাফল্যের মূল্য সাধারণত 60-70%। এই বিশেষ সাফল্যের মূল্য আক্রমণাত্মক অবস্থার মধ্যে হ্রাস করা যেতে পারে। এই কারণে, যখন চিংড়ির সাথে যুক্ত পিএল মেডিকেল ফিশ-পুকুরটি আসলে বড় হয় এবং প্রকৃত লাইফস্টাইল ফিশ-পুকুরের দিকে নির্দেশিত হয়। 5-3 ইঞ্চি, এটি চলে যায় না, যদি অতিরিক্ত চিকিত্সা আসলে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়।


চিংড়িকে প্রায়ই খুব বেশি জল খাবার দেওয়া হয়। যে কারণে যে কোন কারণে জীবনধারা মাছ-পুকুরের মধ্যে চিংড়ি সংখ্যাগরিষ্ঠ চলে যায় এবং অতএব প্রাথমিক ভাগ ঘনত্ব সম্পর্কে প্রায়ই চিন্তা করা হয়, প্রায় 1 হাত এই ধরনের খাবার নষ্ট হতে যাচ্ছে, তবে পরিত্যক্ত খাবার হতে পারে অর্জন এবং মাছ-পুকুরের পানীয় জলও নষ্ট হতে চলেছে।

 3 শিশুর ঘর মাছ-পুকুর


চিকিৎসা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে 10-40 % পুকু বেছে নেওয়া ভাল। সামান্য মাছের পুকুরের মধ্যে চিকিৎসার একটি অতিরিক্ত সুবিধা হতে পারে জীবনধারা মাছের পুকুরের অল্প সময়ের ব্যবহার। এই পদ্ধতিতে লাইফের মধ্যে অতিরিক্ত সামুদ্রিক খাবার তৈরি করে অনেক বেশি রাজস্ব আয় করা যেতে পারে


চিকিত্সা ব্যবহার করা উচিত যাতে সূর্যের আলোতে জল উষ্ণতা না পায়। পিএল-এর সাথে সম্পর্কিত সুরক্ষার ক্ষেত্রে, শুকনো ডাল এবং 2-3 শতাংশ নারকেল বা হাত বা দিন বা বাঁশের বিছানার লাঠিগুলি পঁয়তাল্লিশ স্তরের অবস্থান থেকে পানীয় জলের মধ্যে লুকিয়ে রাখা উচিত। কোনভাবেই ডাল সরবরাহ না করা উচিত। শিশুর ঘরের মাছ-পুকুর থেকে প্রকৃত সুবিধা অবশ্যই কঠিন, শক্তিশালী, নিরাপদে স্থির করতে হবে।


মাছের পুকুরের প্রধান সুবিধাগুলির সাথে ইন্টারনেটের সাথে ঘিরে রাখা উচিত। জালের সাথে আশেপাশের উদ্দেশ্য হবে সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, শুঁয়োপোকা এড়ানো এবং প্রকৃত শিশুর ঘরের মাছ-পুকুরে throughোকার পাশাপাশি বাইরে থেকে রেনু পোনা খাওয়া। উপরন্তু, নিয়ম বা এমনকি laces এবং ফিতা প্রায়ই প্রকৃত মাছ-পুকুর বন্ধ করা প্রয়োজন।

চিংড়ি মাছ-পুকুর পরিকল্পনা


যেমন অতিরিক্ত সামুদ্রিক খাবার, গলদা চিংড়ি মাছের পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। কোন কারণেই বর্তমানে মাছ-পুকুর থেকে অতিরিক্ত ময়লা হওয়া উচিত নয়। প্রকৃত মাছ-পুকুর প্রস্তুত করার সময়, চুনের সাথে যুক্ত 1-2 কেজি সহ প্রকৃত মাছ-পুকুরের আয়োজন করা ভাল। বায়ুপ্রবাহের বিষয়ে মাছ-পুকুরের চারপাশে যথেষ্ট মৃদুভাবে রাখা উচিত। মাছের পুকুর থেকে পরিকল্পনার শুরুতে, সমস্ত সামুদ্রিক খাবার, যেমন পৈশাচিক সামুদ্রিক খাবার, যদি আপনি ছোট খাওয়ার জল পান তবে ধরে রাখার সাথে সাথে মুছে ফেলা উচিত। শেয়ার মাছের পুকুরের মধ্যে পানীয় জলের সাথে যুক্ত 4-5 ফুট বজায় রাখা ভাল। যখন পানীয় জলের স্তর আসলে বেশি হয়, তখন বাতাসের অভাব হতে চলেছে। যাইহোক, যখন পানীয় জলের স্তর আসলে কমে যায়, তখন পানি উষ্ণ হতে পারে।

পোনা শেয়ারের পাশাপাশি গলদা চিংড়ির খাবারের তালিকা


2-2 সম্পর্কিত মেডিকেল ফিশ-পুকুরের মধ্যে মেডিকেল করা হলে। 5 কয়েক সপ্তাহ, প্রকৃত চিংড়ি দুটি সম্পর্কে হতে যাচ্ছে। 5-3 ইঞ্চি মাত্রায়। এই বিশেষ মাত্রাটি স্থানীয় শব্দভাণ্ডারের মধ্যে ছটকা নামে পরিচিত। চিংড়ি সর্বভুক প্রাণী হতে থাকে। গলদা চিংড়ি খাবার যে কোন ধরনের খাবারে নির্দেশিত হতে পারে যা পানীয় জলকে ক্ষতিকর রাখে। দুই। 5-3 ইঞ্চি মাত্রায়।



লেখক


মহসিন আলম


পরিচালন অধিকর্তা

সালেহা মহসিন এগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ লি।


Lobster farming method- Modern method of lobster farming

 Lobster farming method- Modern method of lobster farming


Lobsters can be farmed well in fresh water and light salt water. Lobsters are one of the fastest growing freshwater shrimps in Bangladesh and other parts of the world. In the natural environment, lobsters are found in fresh water and slightly saline water. However, they prefer to stay in the higher reaches of the river where the tides vary. In our country it is possible to increase the production several times by cultivating lobster in a modern way.

In different countries of the world, the production of lobster by modern method has increased from 1200 to 2500 kg per acre. In our country, modern lobster farming has not become widespread except for a few farmers.


Lobster Introduction:

Freshwater shrimp is called prawn. Lobsters are known as Giant Fresh water Prawn in the world. Lobster Scientific name: Macrobrachium Rosenberg. Lobsters are invertebrates, cold-blooded, shellfish nocturnal omnivores. Each time the shell changes, the lobster grows physically. Lobsters take in digestible organic matter, animals, plant particles (Diatom, Copepod, Crustaceans) etc. as food. Male gallbladder is relatively larger than female gallbladder and is fast growing. Cannibalism exists. Therefore, if there is no food till the time of changing the shell, the strong shrimp eats the soft shrimp whenever it gets a chance.

Benefits of lobster harvesting:

Lobsters tend to be quick developing.
Meals expenses tend to be reduced;
Plenty of need on the market;
Costs tend to be greater because of foreign trade possibilities;
Could be captive-raised along with additional carp as well as within paddy areas;
Could be grown within freshwater as well as reduced salinity drinking water (salinity under 5 ppt).
Solitary as well as combined harvesting (with carp-rui, katla, mrigel) can be achieved.
Renu pona or even PL can be obtained through organic resources as well as hatchery.
Omnivorous creatures, dietary supplements could be very easily used because meals.
Extra preparing food elements could be very easily gathered.
Along with ready-made meals, non-traditional meals for example pulses, maize, taters, whole wheat, and so on. could be provided because meals;
Farming having a small treatment decreases the actual occurrence associated with illnesses, leading to cheaper associated with medications along with other advices.
Selling price, need is actually higher and may end up being offered very easily.

Lobster harvesting technique:

Within our nation, lobsters are often captive-raised within 2 methods:

1. Solitary farming technique: two. Combined farming technique:
Solitary farming technique:

Solitary lobster harvesting just. Usually 100-110 fry could be saved for each hundred years within solitary harvesting technique. If your thoroughly clean program could be organized with this particular ration, 200-300 fry could be saved for each hundred years. Within solitary farming technique the actual deliver for each acre is actually 400-500 kg.
Combined farming technique:

Rui, Katla, Metallic Mug as well as Bighead seafood tend to be grown along with lobster with this technique. Within combined harvesting program 60-70 lobsters as well as 3-4 carp fry tend to be filled for each hundred years. Because shrimp are extremely costly seafood as well as their own meals is extremely costly, it is best to provide the combined lifestyle associated with seafood which has a greater marketplace worth. In this instance it is best to provide 400-500 gr associated with rui as well as katla seafood. These types of may consider regarding 3-3. 5 kg during the time of shrimp selection. Within combined harvesting, absolutely no seafood could be provided along with shrimp which will consume the actual shrimp as well as that have reduced marketplace worth. Manufacturing for each acre is actually 200-300 kg associated with shrimp as well as 2000-2500 kg associated with carp.
Invoice associated with lobster pollen fry:

Galdar could be gathered through streams as well as estuaries like a organic supply. Additionally, hatchery-grown galdar renu can also be obtainable. The very first Renu will come in March-April within Chaitra-Baishakh as well as Galda Renu will come in September-October for the finish from the 12 months. For me, the caliber of shrimp pollen from organic resources is actually great.
Shrimp PL Publish Larva Medical:

PL will need to depart at the start from the period we. at the. at the start from the 30 days associated with Baishakh. After that so long as it's past due, the amount of woman shrimp could be more as well as the amount of guys is going to be much less. The actual deliver is actually reduced since the woman shrimp is actually little in dimensions. Natural powder match ought to be provided within the very first 20-25 times following departing PL. In the beginning 10 gr associated with natural powder give food to could be provided for each 1000 please. Progressively improve the quantity of natural powder. After that you need to begin providing pellet give food to within little dimension.

Within the very first situation, the actual shrimp dinner should have 30-40% proteins: With regard to big shrimps, this diet should include 28-30% proteins. The actual success price associated with shrimp pollen PL is generally 60-70%. This particular success price could be reduced within aggressive conditions. Because of this, when the PL medical fish-pond associated with shrimp is actually bigger as well as directed at the actual lifestyle fish-pond around two. 5-3 in ., it doesn't pass away, in the event that additional treatment is actually used correctly.

Shrimp are often provided too much water meals. In the event that for whatever reason the majority of the shrimps within the lifestyle fish-pond pass away and therefore are given frequently thinking about the preliminary share denseness, about the 1 hands this kind of meals is going to be squandered, however abandoned meals may achieve and also the fish-pond drinking water is going to be squandered. 3
Baby's room fish-pond

It is best to pick 10-40 % puku with regard to medical. An additional benefit of medical within little fish ponds may be the small amount of time utilization of lifestyle fish ponds. In this manner much more revenue could be produced by creating additional seafood within the lifestyle fish-pond throughout 2-3 several weeks associated with medical. The actual much less dirt there's at the end from the fish-pond, the greater. Loam or even exotic loam organic dirt 3. 5-4 ft heavy entire fish-pond, PL will work for medical.

Treatment ought to be used to ensure water doesn't obtain warm within the sunlight. With regard to protection associated with PL, dried out pulses along with 2-3 percent coconut or hand or day or bamboo bedding sticks ought to be hidden within drinking water from forty five level position. On no account ought to uncooked pulses supply. The actual advantage from the baby's room fish-pond must be fixed difficult, powerful, securely.

Top of the the main advantage from the fish-pond ought to be encircled along with internet. The objective of around along with netting would be to avoid snakes, frogs, crabs, caterpillars through getting into the actual baby's room fish-pond as well as consuming Renu pona through outdoors. Additionally, rules or even laces and ribbons need to be stopped the actual fish-pond often.
Shrimp fish-pond planning

Such as additional seafood, lobster harvesting fish ponds have to be ready. On no account ought to presently there end up being extra dirt at the end from the fish-pond. While preparing the actual fish-pond, it is best to organize the actual fish-pond along with 1-2 kg associated with lime scale. Sufficient gentle ought to be held thoroughly clean round the fish-pond with regard to air flow. At the start from the planning from the fish-pond, all of the seafood, such as the demonic seafood, ought to be wiped out along with Retention if you find small drinking water. It is best to maintain 4-5 ft associated with drinking water within the share fish pond. When the drinking water level is actually higher, air is going to be lacking. However, when the drinking water level is actually reduced, water can become warm.
Pona share as well as lobster meals checklist

In the event that medical is performed within the medical fish-pond with regard to 2-2. 5 several weeks, the actual shrimp is going to be regarding two. 5-3 in . in dimensions. This particular dimension is known as Chhatka within the local vocabulary. Shrimp tend to be omnivorous creatures. Lobster meals could be directed at any kind of meal maintaining the caliber of drinking water undamaged. two. 5-3 in . in dimensions.


Author

Mohsin Alom supto

Managing Director
Saleha Mohsin Agro & Fisheries Ltd.











বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১

মাছ চাষের উন্নত পদ্ধতি

ভূমিকা
সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের জনসংখ্যা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। বর্ধিঞ্চু জনগোষ্ঠির পুষ্টির চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমিষের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের প্রতিদিনের শারিরীক প্রয়োজনে যে পরিমান আমিষ পাই তার ছয় ভাগেরও অধিক আসে মাছ থেকে। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক সুষম পুষ্টি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জনপ্রতি প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৪৫ গ্রাম মাছ খাওয়া দরকার কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা খেয়ে থাকি মাত্র ২০-৪৫ গ্রাম মাছ। এজন্য জনগণের মাছের চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিভিন্ন বৎসরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এ ধরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে লাগসই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ বৃদ্ধি করা আবশ্যক। আমাদের দেশের পর্যাপ্ত সংখ্যক নদী-নালা, পুকুর-দিঘী এবং অপরাপর অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে বিজ্ঞান-ভিত্তিক প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে কাংখিত মাত্রায় মাছ উৎপাদন করে দেশের বর্ধিঞ্চু জনগোষ্ঠির আমিষের চাহিদা অনেকাংশই পূরণ করা সম্ভব হবে। মাছ চাষের সাথে গ্রাম বাংলার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব হ্রাস করা সম্ভব হবে এবং রপ্তানি আয় বাড়ানোর মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণ ও জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়ণ ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও একক এবং সমন্বিত মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মৎস্যচাষী এবং অন্যান্য সুফলভোগীর সম্যক ধারণা প্রদানের প্রয়াসে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এ পর্বে সমন্বিত মাছ চাষের ধারণা, প্রয়োজনীয়তা এবং তার কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ

সংশ্লিষ্ট তথ্য
১. সমন্বিত মাছ চাষ বলতে কি ধরণের মাছ চাষ বুঝায়?• সমন্বিত মাছ চাষ বলতে মাছ, হাঁস-মুরগী, গবাদিপশু এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কৃষিজাত ফসলের মিশ্র চাষ পদ্ধতিকে বুঝায়।
২. সমন্বিত মাছ চাষ করার উপকারিতা কি কি?• সমন্বিত মাছ চাষে সার প্রয়োগ ও সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ না করেও পুকুর-দিঘীতে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যেতে পারে। সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতিতে গবাদিপশুর গোবর, বিষ্ঠা এবং হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা সার হিসেবে ব্যবহার করে পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য সরবরাহ করা যায়। গবাদিপশু অথবা হাঁস-মুরগি পালন ছাড়াও মাছের সাথে পুকুর পাড়ে শাক-সবজি ও রেশম কীটের চাষ সমন্বিতভাবে করা যেতে পারে।
৩. সমন্বিত মাছ চাষ কার্যক্রমে মুখ্য কার্যক্রম হিসেবে কোন ফসলকে গণ্য করা হয়?• সমন্বিত মাছ চাষে মাছ চাষকে মুখ্য কার্যক্রম হিসেবে গণ্য করা হয়।
৪. সমন্বিত মাছ চাষের উপকারিতা কি কি?• সনাক্তকৃত প্রতিকূলতার কারণে আমাদের দেশে পুকুর-দিঘীতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে মাছ চাষ কার্যক্রম হাতে নেয়া সম্ভব হয় না। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে মোট খরচের ৫০-৬০ শতাংশ সার আর সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের জন্য হয়ে থাকে। বাস্তবতার নিরিখে বলা যেতে পারে যে, আর্থ-সামাজিক কারণে পুকুরের মালিকগণ কৃষি ফসল উৎপাদনের ব্যয় বহনের পর মাছ চাষের জন্য আলাদা ব্যয় বহন করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে স্বল্প ব্যয়ের লাগসই উৎপাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
৫. সমন্বিত মাছ চাষের উপকারিতার আওতায় কিভাবে অধিক খাদ্য উৎপাদন করা যায়?• সমন্বিত মাছ চাষের সাথে সাথে পুকুরের ঢাল, পাড় এবং কিনারায় শাক-সবজির চাষ এবং হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন করা যায়।
৬. সমন্বিত মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় মাছের সাথে কি কি খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন সম্ভব হতে পারে?• সমন্বিত মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় মাছের সাথে মাংস (গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল ও ভেড়া পালন), ডিম (হাঁস-মুরগি), দুধ (গাভী পালন) এবং শাক-সবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। এমনকি কোন একক পশু-পাখি হতে নির্ধারিত সময়ে খাদ্য সামগ্রীও উৎপাদন করা যায়।
৭. সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতিতে সম্পদের অপচয় কমানো এবং পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করা যায় কি?• আধুনিক চাষাবাদের কারণে বিভিন্ন উৎপাদন উপকরণের ব্যবহার পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নানা ধরণের উপজাত বর্জ্য বা উচ্ছিষ্ট পরিত্যক্ত হয় যা পরিবেশ দূষিত করে থাকে। সমন্বিত মাছ চাষ প্রণালীতে একটি উপজাত বা বর্জ্য বা উচ্ছিষ্ট অন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এ কারণে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটে। ফলশ্রুতিতে সামগ্রিকভাবে কোন একটি ফসল থেকে অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়।
৮. সমন্বিত মাছ চাষ উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় কিভাবে বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে?• সমন্বিত মাছ চাষের খামারে একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের ফসলের উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এতে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নতুন ও বাড়তি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। এভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমন্বিত মাছ চাষ গ্রামীন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
৯. সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতিতে কিভাবে বহুমুখী দক্ষতার উন্নয়ণ সম্ভব হয়?• সমন্বিত মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় একটি নির্ধারিত ক্ষেত্রেই একই নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ কারনে লোকবল উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে থাকে।
১০. সমন্বিত মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় কিভাবে উৎপাদন খরচ কমানো যায়?• মাছ চাষের মোট খরচের প্রায় ৫০-৬০ শতাংশই সার এবং সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের জন্য খরচ হয় কিন্তু সমন্বিত মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা পুকুরের সার হিসেবে এবং উচ্ছিষ্ট মাছের খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করা যায়। এর ফলে মাছের উৎপাদন ব্যয় কমে যায় এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদন আশা করা যায়।
১১. সমন্বিত মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার কিভাবে করা যায়?• সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় একক ক্ষেত্রে নানা ধরণের উৎপাদন সুবিধাকে একই সময়ে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। আরও সহজভাবে বলা যায়, একই সময়ে একাধিক ফসল উৎপাদন চক্র আবর্তিত হয় যার ফলে সম্পদের অতি সুফল ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
১২. সমন্বিত মাছ চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ সম্ভব হয় কি?• সমন্বিত মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় কোন একক ক্ষেত্রের-সংশ্লিষ্ট আলাদা আলাদা ক্ষেত্রের মধ্যে পারস্পারিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও আদান প্রদানের সমন্বয়ে বিভিন্ন উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। এ কারণে আলাদা আলাদা ক্ষেত্রের সহনীয় উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয় এবং জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষিত হয়।
১৩. সমন্বিত মাছ চাষের উপকারিতা কি কি হতে পারে?- সমন্বিত মাছ ও মুরগি পালন
- সমন্বিত মাছ ও হাঁস পালন
- সমন্বিত মাছ ও গবাদি পশু পালন
- ধান ক্ষেতে মাছের সমন্বিত চাষ
- মাছ ও খুদে পানার সমন্বিত চাষ
- সমন্বিত মাছ ও ফল মূল শাক-সবজি চাষ এবং
- মাছ ও রেশম কীটের সমন্বিত চাষ
মৎস্য – খামারের ধারনা এবং খামারের স্থান নির্বাচন
১৪. মৎস্য চাষ বলতে কি বুঝায়?• কোন জলাশয়ের প্রাকৃতিক উর্বরতায় স্বাভাবিকভাবে মাছের যে উৎপাদন পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশি উৎপাদনের কৌশল বা পদ্ধতিকে মাছ চাষ বলা হয়।
১৫.উপরোক্ত ধারনাটির আরও সহজ ব্যাখ্যা কী হতে পারে?• কোন একক আয়তনের জলাশয়ে সঠিক জাতের পোনা মজুদ, সার প্রয়োগ, খাদ্য সরবরাহ এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সময়ে অধিক মাছ উৎপানের কৌশল বা পদ্ধতিই হল মাছ চাষ।
১৬. মৎস্য খামার বলতে কোন ধরনের খামারকে বুঝায়?• নির্দিষ্ট যে জলাশয়ে মৎস্য চাষ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে তাকে মৎস্য খামার বলা হয়। আরও সহজে বলা যায় যে মৎস্য চাষের ক্ষেত্রই হল মৎস্য খামার।
১৭. মৎস্য খামারের আকার ও আয়তন কিরূপ হতে পারে?• মাছ চাষের ধরন, খামারীর সঙ্গতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলাশয়ের আকার ও আকৃতি এবং খামারীর ইচ্ছানুসারে মৎস্য খামারের আকার, আয়তন, প্রকৃতি ইত্যাদি ভিন্ন রুপ হতে পারে।
১৮. মৎস্য খামারে পুকুরের আয়তন কি রকম হতে পারে?• সাধারণত একটি আদর্শ মৎস্য খামারে আতুর পুকুর, লালন পুকুর এবং মজুদ পুকুরের আয়তনের মধ্যে একটি সঠিক অনুপাত থাকে।
১৯. কি কি কারণে খামারের স্থান নির্বাচনের প্রয়োজন হয়?• সমন্বিত মৎস্য খামার একটি বহুমুখী উৎপাদন ক্ষেত্র বিধায় খামারের নির্ধারিত স্থান খামারের মুলধন বিনিযোগ, চলতি খরচ এবং আয়কে সরাসরি প্রভাবিত করে।
২০. খামারের স্থান সঠিক না হলে মৎস্য খামারের কি ক্ষতি হতে পারে?- খামার ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে
- মৎস্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যেতে পারে
- মৎস্য বাজারজাতকরণে সমস্য হতে পারে
- উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট অপরাপর সামগ্রীর প্রাপ্তি ও ব্যবহারে অসুবিধা হতে পারে
- খামারের লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
২১. মৎস্য খামার স্থাপনে স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে?• মাটির গুণাগুণ, পানির গুণাগুণ ও প্রাপ্যতা, ভূ-প্রকৃতির অবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবেশ, নিরাপত্তা, বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা, ভোক্তার ধরন এবং মাছের বাজার মূল্য এসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।
২২. জলাশয়ের উৎপাদন ক্ষমতা কিসের উপর নির্ভরশীল?• জলাশয়ের তলার মাটির প্রকৃতির উপর জলাশয়ের উৎপাদন ক্ষমতা নির্ভরশীল কারণ জলাশয়ের পানি ধারনের আধার হল মাটি।
২৩. খামারের স্থান নির্বাচনের সময় কোন বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য করতে হবে?• খামারের স্থান নির্বাচনের সময় উপরের স্তরের মাটির গুণাগুণের সাথে যে গভীরতায় পুকুর খনন করা হবে তার বিভিন্ন স্তরের মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করতে হবে।
২৪. মাটি নির্বাচনে কি কি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে?• পানি ধারন ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যকর জলজ পরিবেশ ও পানির প্রাকৃতিক খাদ্যের যথার্থ প্রাচুর্যতা থাকতে হবে।
২৫. মাছ চাষে পুকুরের মাটির উর্বরতা এবং ধরনের কি সম্পর্ক থাকে?• মাটি পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগান দেয় এবং দূষণ রোধ করে। এটেল মাটির পুকুরে তলার কাদার উপরের স্তরে খাদ্যের আদান প্রদান প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। অপর দিকে বেলে মাটির গঠন ঢিলা হওয়ায় পানির ধারন ক্ষমতা কম হয়। এতে সার প্রয়োগের ফলে পুকুরে সরবরাহকৃত পুষ্টিসমূহ তলায় জমা হয়ে মাছের নাগালের বাইরে চলে যায়।
২৬. মাটির ধরনের কারণে উৎপাদন খরচ কম-বেশি হয় কি?• এটেল মাটি ও বেলে মাটির পুকুরে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। লাল মাটির পুকুরে পানি ঘোলা হয়। সূর্যের আলো পানির নির্দিষ্ট গভীরতায় পৌছাতে পারে না। এতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়।
২৭. বেলে মাটি ও লাল মাটির পুকুরে আর কি সমস্যা হতে পারে?• পুকুরের পাড় অতি সহজে ভেঙ্গে যায়।
২৮. মাছ চাষে পুকুরের কোন ধরনের মাটি উত্তম?• পানি ধরে রাখা এবং পুষ্টি আদান প্রদানের ক্ষেত্রে দো-আঁশ মাটি উত্তম। এ কারণে দো-আঁশ মাটিযুক্ত স্থান মৎস্য খামারের জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
২৯.মৎস্য খামারের স্থান নির্বাচনে পানির রাসায়নিক গু্ণাগুণ কি রকম হওয়া দরকার?• পানির পিএইচ ৬.৫-৮.৫ এবং পানির পিএইচ নিরপেক্ষ হলে মাছের খামার স্থাপনের জন্য উত্তম।
৩০. পানির পিএইচ বলতে কি বুঝায়?• পিএইচ বলতে পানির ক্ষারত্ব অথবা অম্লত্ব কিনা তা বুঝায়।
৩১. পানির পিএইচ কম-বেশি হলে মাছ চাষে কি ধরনের সমস্য হতে পারে?• মাছের উৎপাদন কম হবে।
৩২. মৎস্য খামার স্থাপনে সর্ব প্রথম কোন বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে?• মৎস্য খামার স্থাপনে সর্ব প্রথম দূষণমুক্ত পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। পানির সকল গু্ণাগুণ সঠিক মাত্রায় হলে যেকোন উৎসের পানিতে মৎস্য খামার স্থাপন করা যায়।
৩৩. কোন স্তরের পানি সাধারণত মাছ চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী?• ভূ-পৃষ্টের উপরিভাগের পানি সাধারনভাবে মাছ চাষের জন্য অধিকতর উপযোগী।
৩৪. কি কারনে ভূ-পৃষ্টের উপরিভাগের পানি মাছ চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী?• ভূ-গর্ভস্থ পানির তাপমাত্রা কম থাকে এবং পানিতে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমান বেশি থাকে।
৩৫. ভূ-গর্ভস্থ পানি মাছ চাষে ব্যবহার করতে হলে কি করতে হবে?• ভূ-গর্ভস্থ পানি মাছ চাষে ব্যবহার করতে হলে তা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৫-৩০ ফুট উচু থেকে ঝরনার আকারে খামারে ফেলতে হবে।
৩৬. কি কি কারনে পানি ঝরনার আকারে ২৫-৩০ ফুট উপর থেকে ফেলতে হবে?• পানির কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমান কমে যাবে, অক্সিজেনের পরিমান বেড়ে যাবে এবং পানির তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে।
৩৭. কয়লা বা তেলের খনি এলাকার পানি মাছ চাষে ব্যবহার করতে হলে কি করতে হবে?• ভূ-গর্ভস্থ পানির গু্ণাগুণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৎস্য চাষের জন্য ব্যবহার করতে হবে। একইভাবে রাসায়নিক কারখানা থেকে নির্গত পানি যথাযথভাবে শোধন না করে মৎস্য খামারে সরবরাহ করা যাবে না।
৩৮. কোন ধরনের কারখানার পানি মৎস্য চাষের জন্য উপকারী এবং উপযোগী হতে পারে?• খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা যথা কসাইখানা হতে নির্গত পানি মৎস্য খামারের জন্য খুবই উপযোগী হতে পারে কারণ কসাইখানার নির্গত রক্ত পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।
৩৯. মৎস্য খামারের পানির পিএইচ এবং দ্রবীভূত অক্সিজেনের আদর্শ মাত্রা কি পরিমান হতে হবে?• পানির আদর্শ পিএইচ মাত্রা ৭.০-৮.৫ এবং দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৫.০-৮.০ নিযুতাংশে থাকতে হবে এবং কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমান এক (১.০) এর নিচে হতে হবে।
৪০. মৎস্য খামার স্থাপনের ক্ষেত্রে পানি-সংশ্লিষ্টতার আর কি কি বিষয় খেয়াল করতে হয়?• শুকনা ও খরা মৌসুমে পানির সহজ প্রাপ্যতা এবং বন্যায় খামারের পাড় প্লাবিত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়।
৪১. মৎস্য খামারের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভু-প্রাকৃতিক অবস্থা কেমন হওয়া দরকার?• একই সংগে একাধিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিধায় কিছুটা অসম স্থানও খামারের জন্য নির্বাচন করা যায়। আলাদা আলাদা ভু-প্রাকৃতিক অবস্থান-সম্বলিত স্থানের সমন্বয়ের মাধ্যমে পৃথক পৃথক কার্যক্রম সহজে পরিচালনা করা যায়।
৪২. পাহাড়ী এলাকায় সমন্বিত মৎস্য খামার পরিচালনা করা যাবে কি?• পাহাড়ী এলাকা অসম এবং উঁচু-নিচু হওয়াতে সমন্বিত মৎস্য চাষের জন্য উপযোগী হয় না। যে কারণে সমতল স্থান সমন্বিত মৎস্য খামারের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
৪৩. মৎস্য খামার স্থাপনের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বসমূহ কি?• খামারের সার্বিক নিরাপত্তা, খামার পরিচালনার ক্ষেত্রে যাতায়াৎ ও পণ্য পরিবহন তদারকী এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা বাঞ্চনীয়। এ কারণে একাধিক যোগাযোগ ব্যবস্থা-যুক্ত স্থানে খামার স্থাপন করা উত্তম।
৪৪. মৎস্য খামারের জন্য নির্বাচিত স্থানের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিৎ?• নির্বাচিত স্থানের পাশে বড় বড় গাছপালা বা ঝোপঝাড় থাকা উচিৎ নয়। কারণ বড় গাছের পাতা ঝরে পড়ে খামারের পানির গু্ণাগুণ নষ্ট করে ফেলতে পারে এমনকি খামারে আলো বাতাস যাওয়াতে বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে। আলো বাতাস এবং পরিমিত ছায়াও মৎস্য খামারের জন্য অপরিহার্য। ঝোপঝাড়ে মৎস্য-চোর ও অপরাপর ক্ষতিকর প্রাণীর আশ্রয়স্থল হতে পারে।
মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনা ও এর গুরুত্ব
৪৫. মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনা বলতে কি বুঝায়?• সাধারণ চিন্তায় কোন লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন কার্যক্রম অথবা কর্মসূচি সুষ্ঠু ও সমন্বিতভাবে পরিচালনা করাকে মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনা বলে। ফলপ্রসুভাবে মৎস্য চাষের লক্ষ্যে প্রয়োগোপযোগী পরিকল্পনা প্রনয়ন এবং উক্ত পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে অধিক মাছ উৎপাদন করাকেই মৎস্য খামার বলে।
৪৬. মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনার প্রধান কাজ কি?• সমন্বিত মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনার প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হল যথাযথ কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করা কারণ বাস্তবভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনানুযায়ী উৎপাদন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমেই মৎস্য চাষের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
৪৭. মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনায় কি কি ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়ে থাকে?• দীর্ঘ মেয়াদী এবং বার্ষিক এ দু’ধরণের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়ে থাকে।
৪৮. দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় কি কি বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়?- মাছের নতুন জাত উন্নয়ণ এবং লাগসই প্রয়োগোপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন
- মৎস্য উৎপাদন দক্ষতার উন্নয়ণ
- মাছ চাষের সাম্প্রতিক প্রবনতা পর্যবেক্ষণ
- জাতীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ণে মৎস্য সেক্টরের ভূমিকা বিবেচনা করা
- খামার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ণ ইত্যাদি
৪৯.বার্ষিক পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয়সমূহ কি হতে পারে?- ভোক্তার চাহিদানুসারে মাছের উৎপাদন ও মাছ বাজারজাতকরণের পরিকল্পনা তৈরি করা
- ভোক্তার রুচি অনুসারে ও চাহিদা সাপেক্ষে মাছের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা
- মানব সম্পদ উন্নয়ণ এবং দক্ষ কর্মী ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বেতন ও মজুরি নির্ধারন করা
- মাছ উৎপাদনের উপকরণ প্রাপ্তির উৎস নিশ্চিত করা ও উপকরণের মান নিয়ন্ত্রন করা
- আবর্তক বিনিয়োগের পরিমান নির্ধারন করা
- কারিগরী ও প্রযুক্তিগত বিষয়াদি বিবেচনা করা
- আর্থিক উপযোগিতা, দায়-দেনা ও লভ্যাংশ নির্ধারন করা
৫০. মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব কি কি?• সমন্বিত মৎস্য খামার পদ্ধতি বহুমুখী উৎপাদন ক্ষেত্র বিধায় এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্ত:নির্ভরশীল উৎপাদন কার্যক্রমে পারস্পরিক ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া ঘটে থাকে। একটি খামারে বিভিন্ন দ্রব্য আনুপাতিক হারে উৎপন্ন হয়। এ কারণে সমন্বিত মৎস্য খামারে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। এ ছাড়া এক উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপজাত বা বর্জ্য অন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উপকরন হিসেবে ব্যবহার করে লাভজনকভিত্তিতে অধিক উৎপাদন প্রাপ্তির লক্ষ্যে সুসংগঠিত ও উপযোগী পরিকল্পনা প্রনয়নের বিকল্প নেই।
৫১. সুষ্ঠু খামার ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কি কি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে?• বাজার চাহিদা, ভোক্তার পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতি রেখে খামার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। এক কথায় বলা যায় খামারের পরিকল্পনা হবে জাতীয় পরিকল্পনার একটি আর্ট। সমন্বিত খামারে যে সকল উৎপাদন প্রক্রিয়া বা ক্ষেত্র পরিচালিত হয় সেগুলোর মধ্যে সুসামঞ্জস্য বা ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমন্বিত খামারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহনীয় উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করা। খামার থেকে স্থিরকৃত উৎপাদনপ্রাপ্তির প্রয়োজনে সম্পদের উৎস, জনশক্তি, উপকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাসমূহকে পরিকল্পনানুযায়ী সুসংগঠিত ও সুসংহত করে পরিকল্পনা প্রনয়ন করতে হবে।
৫২. মৎস্য চাষকে সফল ও লাভজনক করার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে কি কি পর্যায়ে ভাগ করা হয়?• মজুদ পূর্ব ব্যবস্থাপনা, মজুদকালীন ব্যবস্থাপনা এবং মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা।
৫৩. মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনা ফলপ্রসু করার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে?- পোনা ছাড়ার পূর্বে পুকুর থেকে রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণী সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করতে হবে
- পোনা মজুদের সাথে সাথেই সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হবে
- সহযোগী উৎপাদন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে
- মাছের আকার, ওজন, পানির গুনাবলী, ঋতু ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বিবেচনায় রেখে মাছের খাদ্যের উৎপাদন ও পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে
- মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে
- নিয়মিত বিরতিতে আংশিক মাছ আহরণ করতে হবে এবং পুনরায় সমসংখ্যক পোনা মজুদ করতে হবে
- নিয়মিত খামার পরিদর্শন করতে হবে
- সর্বোপরি মৎস্য-বিষয়ক পরামর্শ গ্রহণ ও প্রয়োগ করতে হবে
৫৪. মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনা কি অঞ্চল নির্ভরশীল?• আর্থ-সামাজিক অবস্থার মিশ্রক্রিয়া, কৃষি ও কৃষিজাত উৎপাদন এবং সামগ্রিক ভূ-প্রকৃতি ও পরিবেশগত অবস্থার উপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভরশীল। এ কারণে সমন্বিত খামার প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে এ বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। ভূ-প্রকৃতি এবং পরিবেশের ভিন্নতার কারণে সমন্বিত মৎস্য খামার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হতে পারে। এরূপ পৃথক পৃথক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন এলাকার সমন্বয়ের ক্ষেত্র এবং প্রকৃতিও ভিন্ন হয়ে থাকে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করলে বলা যায় যে, সমন্বিত মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনা অঞ্চল নির্ভরশীল।
৫৫. মৎস্য চাষের কৌশল সংক্রান্ত পরামর্শ কি হতে পারে?• গ্রামীন পুকুর বা ছোট আকারের খামারে মাছের সাথে অন্য একটি বা দু’টি কার্যক্রমের সমন্বিত চাষ করা উত্তম। অপেক্ষাকৃত বড় আকারের খামারে দুই বা ততোধিক উৎপাদন কার্যক্রমের সমন্বয়ে চাষ করা অধিক লাভজনক।
৫৬. মাছ ও মুরগীর সমন্বিত চাষে কতভাবে মুরগী পালন করা যায়?• পুকুর বা জলাশয়ের পানির উপর ঘর করে মুরগী পালন, পুকুর বা জলাশয়ের থেকে দূরে বাড়ির আঙ্গিনায় বা পুকুর পাড়ে মুরগী পালন করে মুরগীর বিষ্টা ও উচ্ছিষ্ট খাদ্যদ্রব্য নিয়মিত পুকুরে প্রয়োগের মাধ্যমে মুরগী পালন করা যায়।
৫৭. মাছ ও মুরগীর সমন্বিত চাষে কি কি সুবিধা আছে?- উৎকৃষ্ট সার হিসেবে মুরগীর বিষ্টা পুকুরে প্রয়োগ করা যায়। পুকুরের উপর ঘর তৈরী করে মুরগী পালন করলে পুকুরে কোন সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। এতে মুরগীর বিষ্টারও সঠিক ব্যবহার হয়
- মুরগীর দ্বারা ছিটকেপড়া খাদ্যদ্রব্য ও উচ্ছিষ্ট সরাসরি পানিতে পড়ে। ফলে মাছের জন্য কোন সম্পূরক খাদ্য দেয়ার প্রয়োজন হয় না
- মুরগীর বিষ্টার মধ্যে থাকা আধাহজম হওয়া খাদ্যদ্রব্য এবং মুরগীর বিষ্টা খাদ্য হিসেবে মাছ গ্রহণ করে
- পুকুরের পানির উপরে মুরগীর ঘর তৈরী করার কারণে মুরগী পালনের জন্য আলাদা কোন স্থান বা ঘরের প্রয়োজন হয় না
- পুকুরের পানির উপরে মুরগীর ঘর তৈরী করা হয় বলে মুরগীর সাথে মাটির সংস্পর্শ থাকে না যে কারণে মুরগীর রোগবালাই কম হয়
- সমন্বিত মাছ ও মুরগী চাষে একই খামার থেকে মাছ, মাংস ও ডিম পাওয়া যায়। ফলে অধিক খাদ্য উৎপাদন হয় এবং সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়
- সমন্বিত মাছ ও মুরগী চাষে অপেক্ষাকৃত কম বিনিয়োগে, কম শ্রমে এবং কম সময়ে বেশী আয় করা যায়
৫৮. পুকুরে হাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ পদ্ধতির সাধারণ ধারনা কি?• পুকুরে সমন্বিত মাছ ও হাঁস চাষ একটি লাভজনক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে পুকুরে হাঁস পালন করলে পুকুরে কোন প্রকার সার ও মাছের জন্য সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের প্রয়োজন হয় না। কৃষকের আবাদি জমি না থাকলেও একখন্ড পতিত জলাশয় থাকলে তাতে মাছের সাথে হাঁস চাষ করলে আর্থিক স্বচ্ছলতা, কর্মসংস্থান এবং পুষ্টির যোগান হতে পারে। পতিত জলাশয়ে একসাথে হাঁস ও মাছের চাষ করলে নিজেদের আমিষের ঘাটতি পূরণ করেও বাড়তি আয় করা সম্ভব।
৫৯. সমন্বিত মাছ ও হাঁস চাষে হাঁসের ঘর কিভাবে নির্মাণ করা যেতে পারে?• পুকুরের পানির উপর হাঁসের ঘর করে পুকুরের কিছুটা অংশ হাঁসের সাতার কাটা বা বিচরনের জন্য বেড়া দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেয়া এবং এর সাথে পানিতে নামার সিড়ি করে দেয়া। পুকুর পাড়ের উপরে হাঁসের ঘর করে পানির অংশ বিশেষ বেড়া দিয়ে নির্দিষ্ট করে বিচরণ ক্ষেত্র তৈরী করা ও পাড়ে একটি গর্ত করে সেখানে হাঁসের ঘর থেকে সংগৃহীত বিষ্টা বা উচ্ছিষ্ট জমা রেখে পরিমাণমত পুকুরে প্রয়োগ করা যাবে।
৬০. উপরের বর্ণনামতে কোন ধরণের ঘর সমন্বিত মাছ ও হাঁসের চাষের জন্য বেশী সুবিধাজনক?• হাঁস অধিকাংশ সময় পানিতে অবস্থান করে বিধায় পুকুরের উপর ঘর তৈরী করা উত্তম। এর ফলে হাঁসের বিষ্টা ও উচ্ছিষ্ট খাদ্য সরাসরি পানিতে পড়বে এবং মাছ খেতে পারবে।
৬১. সমন্বিত মাছ ও হাঁস চাষে কি ধরণের সুবিধা পাওয়া যায়?- হাঁসের বিষ্টা অতি উত্তম জৈব সার হিসেবে পুকুরে ব্যবহার করা যায়। পানির উপর ঘর করে হাঁস পালন করলে পুকুরে মাছের জন্য সার বা সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করার প্রয়োজন হয় না
- পুকুর ও জলাশয়ে এক সাথে মাছ ও হাঁসের উত্তম আবাসস্থান। পুকুরের তলদেশ থেকে হাঁস যখন খাদ্য সংগ্রহ করবে তখন কাদা আলগা হয়ে যাবে এবং পুকুরের পুষ্টি-চক্র সচল ও ত্বরান্বিত হবে
- বিচরনের সময় হাঁস স্বেচ্ছাসেবকের মত পানিতে অক্সিজেন মিশ্রিত করে। এ কারণে পুকুর ও জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে
- হাঁস পানিতে বা পুকুর জলাশয়ের প্রান্তভাগে বসবাসকারী অনেক মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে যেগুলো মাছের পোনা খেয়ে ফেলে বা মাছের রোগ সৃষ্টি করে। পুকুরের আগাছা নিয়ন্ত্রনে হাঁস সহায়তা করে এবং পরজীবির জীবনচক্র নষ্ট করে দেয়। ফলে মাছের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সহজ হয়
৬২. হাঁসের সরবরাহকৃত খাদ্যের কি পরিমান অপচয় হয়?• খাদ্য গ্রহণের সময় সাধারণত ১০-২০% খাদ্য অপচয় হয়। এভাবে দেখা যায় যে, বানিজ্যিকভাবে হাঁস পালনে প্রতি হাঁসের দ্বারা প্রতিদিন ২৩-৩০ গ্রাম খাদ্য অপচয় হয় এবং এ পরিমান খাদ্য পানিতে পড়লে মাছ খেতে পারে। তাই মাছের সম্পূরক খাদ্য দিতে হয় না।
৬৩. সমন্বিত মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে হাঁস ও মাছকে কুটিপানা খাওয়ানো যাবে কি?• কুটিপানা এক ধরনের ক্ষুদে জলজ উদ্ভিদ যা আমিষে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ এবং এতে আরও অনেক ধরনের পুষ্টি আছে। এ কারণে কুটিপানা হাঁস ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬৪. বাংলাদেশে কত ধরনের কুটিপানা পাওয়া যায়?• বাংলাদেশে মূলত তিন ধরনের কুটিপানা পাওয়া যায়। এগুলো হল নোনাপানা, তেঁতুলেপানা ও সুজিপানা।
৬৫. সমন্বিত মৎস্য খামারের পুকুরে ছাড়ার আগে কোন ধরনের জলাশয়ে কুটিপানা চাষ করা যেতে পারে?• হাজা, মজা ডোবা–নালা ও পুকুরে কুটিপানা চাষ করা যেতে পারে। কুটিপানা মাছ চাষের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণে সহায়তা করতে পারে।
৬৬. কুটিপানা-ভিত্তিক সমন্বিত মৎস্য খামার পরিচালনার সুবিধা কি কি?- কুটিপানা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়
- হাজা, মজা জলাশয়ে ও বর্জ্য পানিতে কুটিপানা চাষের মাধ্যমে পানি পরিশোধন করা হয় এবং পরিবেশের উন্নয়ণ হয়
- কুটিপানার উৎপাদন খরচ কম
- অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের তুলনায় কুটিপানা উচ্চ-ফলনশীল
- কুটিপানার ব্যবসায়িক প্রসারের মাধ্যমে গ্রামীন গরীব লোকজনের আয় ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি সম্ভব
৬৭. মৎস্য খামারের পুকুর ব্যবস্থাপনা বলতে কি বুঝায়?• সমন্বিত মৎস্য চাষ কার্যক্রমের উপকরণের যোগান আসে অন্যান্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপজাত বা বর্জ্য দ্রব্য হতে। এসব দ্রব্যের পরিকল্পনা-ভিত্তিক সুষ্ঠু ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে মাছ চাষ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হতে পারে। সমন্বিত মৎস্য খামারের পুকুর ব্যবস্থাপনা বলতে পুকুরে হাঁস–মুরগীর বিষ্টা বা গবাদিপশুর মলের পরিমিত ও যথাযথ ব্যবহার, পুকুর প্রস্তুতি, পুকুরের পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের পরীক্ষা, পোনা মজুদ, মাছের স্বাস্থ্য ও দৈহিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রমকে বুঝায়।
৬৮. মৎস্য খামার স্থাপনে পুকুর খনন ও নকশা তৈরীর সময় কি কি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে?• সমন্বিত মৎস্য খামারে বহুমূখী উৎপাদন কার্যক্রম পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও নির্ভরশীলতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে বিধায় পুকুর খনন ও নকশা তৈরির সময় পুকুরের পাড়ে বা পানির উপর মুরগী পালনের জন্য ঘর নির্মান, হাঁসের বিচরন ক্ষেত্র্র, গবাদিপশুর ঘর, গোবর চোনা ইত্যাদি সরাসরি নির্গমনের ব্যবস্থার বিষয়টি মনে রাখতে হবে। খামারের স্থান এবং আয়তন নির্ধারনের পর পুকুরের আয়তন, আকার, অবস্থান ও দিক, পাড় ইত্যাদির পরিকল্পনা করতে হবে।
৬৯. আধুনিক প্রযুক্তির-ভিত্তিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে কি কি ধরনের পুকুরের দরকার হয়?• তিন ধরনের পুকুরের দরকার হয় এবং পুকুরগুলোর নাম হল আতুর পুকুর, লালন পুকুর এবং মজুদ পুকুর।
৭০. মৎস্য খামারের পুকুরের আয়তন কি পরিমান হওয়া উচিৎ?• সমন্বিত মৎস্য খামারের পুকুরের মোট আয়তনের ৬০-৬৫ শতাংশ পুকুর কাটা যেতে পারে।
৭১. তিন ধরনের পুকুরের মধ্যে কোনটির জন্য কি আয়তন হতে পারে?• আতুর পুকুর ও লালন পুকুর ২০ শতাংশ এবং মজুদ পুকুর ৮০ শতাংশ থাকতে হবে।
৭২. আতুর পুকুর এবং মজুদ পুকুরের আয়তন কতটুকু হওয়া উত্তম এবং কি কি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল?• আতুর পুকুরের আয়তন ১০-১৫ শতক হলে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা সুবিধাজনক হয়।মজুদ পুকুরের আয়তন ৩০-১০০ শতক পর্যন্ত করা যেতে পারে যা নির্ভর করে খামারের মোট আয়তনের উপর। ৩০ শতকের চেয়ে ছোট পুকুরও মজুদ পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭৩. তিন ধরনের পুকুরের গভীরতা কতটুকু হওয়া দরকার?• আতুর পুকুর ও লালন পুকুরের গভীরতা ১.০-১.৫ মিটার এবং মজুদ পুকুর ২.০-২.৫ মিটার হলে উত্তম হয়।
৭৪. পুকুরের আকার-আকৃতি ও অবস্থান কি রকম হওয়া দরকার?• পুকুর আয়তকার এবং উত্তর দক্ষিনে লম্বালম্বি হওয়া উচিৎ। পুকুরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাত ২:১ বা ৩:২ হতে পারে।
৭৫. উপরিউল্লিখিত ৭৪ নং প্রশ্নোত্তরে আকার-আকৃতি ও অবস্থানের পুকুরে কি সুবিধা আছে?• দিনের দীর্ঘ সময় সূর্যের আলো পড়ে এবং পানিতে বেশি বাতাস মিশ্রিত হয়। এতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য অধিক পরিমানে উৎপাদিত হতে পারে।
৭৬. খামারের একাধিক পুকুরের আকার-আয়তন কি রকম হওয়া দরকার?• প্রশ্নোত্তর নং ৭৩-৭৫ এ উল্লিখিত আয়তনের সমান সমান হলে ভাল হয় এবং গভীরতা কিছুটা কম-বেশি হলেও কোন অসুবিধা হয় না।
৭৭. উল্লিখিত আকার-আয়তনের পুকুর থেকে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়?• জাল টানা ও মাছ ধরার খরচ কম হয় এবং পানি নিষ্কাশন সুবিধা হয়।
৭৮. সমন্বিত মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পুকুরের কয়টি অংশ থাকে?• পুকুরের পাড়, বকচর, ঢাল এবং তলা। পুকুর কাটার সময় এসব অংশগুলোর আনুপাতিক বিস্তৃতি্র আকার ও আয়তন বজায় রাখতে হবে।
৭৯. পুকুর পাড়ের উচ্চতা ও প্রশস্ততা কতটুকু হতে হবে?• যে এলাকায় সমন্বিত মাছ চাষ করা হবে সে এলাকার ভু-প্রকৃতি বিবেচনা করে পুকুর পাড়ের উচ্চতা নির্ধারন করতে হবে। পুকুরের পাড় এমন উচুঁ রাখতে হবে যাতে কোন অবস্থাতেই বন্যায় প্লাবিত না হতে পারে। এ ধরনের বিবেচনায় পুকুরের পাড়ের উপরি তলের প্রশস্ততা ১.৫ মিটার রাখা উত্তম।
৮০. মৎস্য খামারের জন্য একটি আদর্শ পুকুর ও তার ঢাল কি রকম হতে হবে?• পুকুরের পাড়ের ঢালের অনুপাত মাটির প্রকৃতির উপর কম-বেশি নির্ভরশীল। বেলে দোঁ-আশ মাটিতে পুকুরের ভিতরের দিকের ঢাল ২.৫:১ রাখতে হবে তা হলে পাড় ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। এ ধরনের মাটিতে পাড়ের বাহিরের দিকের ঢাল ২:১ রাখা যেতে পারে। দোঁ-আশ মাটিতে পুকুরের পাড়ের ভিতরের দিকের ঢাল ২:১ এবং কাদা মাটির ক্ষেত্রে ১:১ রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাহিরের দিকের ঢাল যথাক্রমে ১.৫:১ এবং ২:১ রাখা দরকার। এ ধরনের ঢাল থাকলে পাড় স্থায়ী হয় এবং ব্যবস্থাপনার সুবিধা হয়।
৮১. মৎস্য খামারের পুকুরে বকচরের সহজবোধ্য পরিচয় দেয়া যাবে কি?• গভীরতার মাঝামাঝি পাড়ের ঢাল ১ মিটার প্রশস্ত বকচর রাখা ভাল। বকচরে জলজ উদ্ভিদ লাগানো যেতে পারে। এতে পানির ঢেউ সরাসরি পাড়ে লাগতে পারে না ফলে পাড় স্থায়ী হয়।
৮২. পুকুরে বকচর রাখার প্রয়োজন কি?• মাছের বিচরণ ক্ষেত্র বাড়াতে বকচর কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৮৩. মৎস্য চাষের জন্য আদর্শ পুকুরের তলা কি রকম হতে হবে?• পুকুরের তলা সমান এবং একদিকে সামান্য ঢালু হলে ভাল হয়। এতে পানি নিষ্কাশন এবং মাছ ধরতে সুবিধা হবে। খননকালীন মাটি মাপার সাক্ষী ভেঙ্গে ফেলতে হবে।
৮৪. পুকুরের তলা সঠিক না হলে মাছ চাষ কার্যক্রমে কি বাঁধার সৃষ্টি হতে পারে?• পুকুরের তলা অসমান হলে পুকুরে মাছের ঘনত্ব নিরুপন, পরিমিত খাদ্যের পরিমাণ নির্ণয়, মাছের স্বাস্থ্য ও দৈহিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণে বিঘ্নতা সৃষ্টি হবে।
৮৫. পুকুরের মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কিভাবে পরীক্ষা করা হয়?• পুকুর তৈরীর জন্য নির্ধারিত স্থানে ৭ থেকে ৮ ফুট গভীর কয়েকটি কুয়া খনন করে কুয়ার বিভিন্ন গভীরতা থেকে মাটি নিয়ে বলের মত বানাতে হবে। পরে বলটি ১ মিটার উপরে ছুড়ে দিয়ে সহজভাবে ধরতে হবে। এতে বলটি যদি ভেঙ্গে যায় তবে ধরে নিতে হবে যে ঐ স্থানের মাটি মাছ চাষের পুকুরের জন্য উপযোগী নয়। আর যদি মাটির বল ভেঙ্গে না যায় তাহলে ঐ পুকুর মাছ চাষের জন্য উপযোগী বলে ধরে নিতে হবে।
৮৬. মৎস্য চাষের পুকুরের মাটি কিভাবে কাটতে হবে?• পুকুরের প্রতিটি অংশ ভালভাবে চিহ্নিত করে খনন কাজ আরম্ভ করতে হবে। সকল অংশের পৃথক পৃথক বিস্তৃতি সনাক্ত করার জন্য ছোট ছোট খুটি ব্যবহার করতে হবে। পুকুরের খনন কাজ শেষ করার পর দুরমুজ বা এ ধরনের কোন ভারী বস্তু দ্বারা পিটিয়ে পাড়ের মাটি ভালভাবে বসিয়ে দিতে হবে। বসানো মাটির উপর ঘাস লাগিয়ে দিলে পাড় স্থায়ী হবে।
৮৭. মৎস্য খামারের পুকুর কত দিনের হলে ভাল হয়?• মাছ চাষের বিগত ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সাধারণভাবে ২-১ বছরের পুরাতন পুকুর মাছ চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
৮৮. মৎস্য খামারের পুকুর কিভাবে সংস্কার করা হয়?• পুকুর অনেক দিনের পুরাতন হলে অনেক ক্ষেত্রেই সামান্য মেরামত বা সংস্কার করতে হয়। সংস্কারের প্রথম ধাপ হিসেবে পাড় মেরামত ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে হবে। পুকুর পাড়ে বড় গাছপালা থাকলে তার ডালপালা কেটে পুকুরে দিনে ছয় থেকে ৮ ঘন্টা রোদ পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুর পাড়ে ঝোপ ঝাড় থাকলে তা কেটে পরিষ্কার করতে হবে। এর ফলে ঝোপ ঝাড়ে মৎস্যভুক প্রাণী বসবাস করতে পারবে না। পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে। বর্ষা বা বন্যায় পাড় যাতে ডুবে না যায় সেভাবে পাড় উঁচু করতে হবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পুকুর শুকিয়ে কাদা অপসারন করতে হবে।
৮৯. অতি পুরাতন পুকুর মৎস্য চাষে কি ক্ষতি করতে পারে?• বেশী পুরাতন এবং অতি কাদাযুক্ত পুকুরে সমন্বিত খামার পরিচালনা করলে পানি দূষণের কারণে মাছ মারা যেতে পারে।
৯০. আতুর পুকুর বলতে কোন পুকুরকে বুঝায়?• রেনু অবস্থায় মাছের জীবন অত্যন্ত সংকটপূর্ণ থাকে। এ কারণে সঠিক প্রয়োজনে রেণু পোনা সরাসরি মজুদ পুকুরে ছাড়া সঠিক হয় না। মজুদ পুকুরে ছেড়ে দেয়ার পূর্বে রেণু পোনাকে অপেক্ষাকৃত ছোট ও অগভীর পুকুরে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে লালন পালন করে কিছুটা বড় ও অভ্যস্ত করে তোলা হয়। রেণু পোনা পালনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এ ধরনের পুকুরকে আতুর পুকুর বলে।
৯১. আতুর পুকুর নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় মূল বিবেচনায় রাখতে হয়?• তুলনামুলকভাবে কম গভীর যে কোন জলাশয় আতুর পুকুর হিসেবে নির্বাচন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পুকুরের আয়তন ১০–২৫ শতক এবং গভীরতা ১.০-১.৫ মিটার হলে সহজভাবে ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। আতুর পুকুর অবশ্য বন্যার আশংকামুক্ত হতে হবে। আতুর পুকুর পাড়ে কোন গাছপালা রাখা সঠিক হবে না। নির্বাচিত আতুর পুকুরে পানি নির্গমনের এবং ভরার ব্যবস্থা রাখা উত্তম হবে।
৯২. আতুর পুকুর ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব কতটুকু?• রেনু পোনার বাঁচার হার এবং আশানুরূপ দৈহিক বৃদ্ধির হার সর্বোতভাবেই আতুর পুকুরের ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল।
৯৩. মৎস্য চাষে আতুর পুকুর ব্যবস্থাপনায় মূল করনীয় বিষয়সমূহ কি হতে পারে?• পুকুর প্রস্তুতি, রেনু ছাড়া, সার প্রয়োগ, খাদ্য সরবরাহ, রেনু পোনার বাঁচার হার ও বৃদ্ধি পরীক্ষা এবং পোনা আহরন।
৯৪. আতুর পুকুর প্রস্তুতির সময় কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়?- পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।
- অবাঞ্চিত ও রাক্ষুসে মাছ সম্পূর্ণভাবে অপসারনের স্বার্থে পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করতে হবে।
- পুকুরের প্রতি শতক জায়গার জন্য ১–২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের ৫ দিন পর রেনু ছাড়ার ৫-৭ দিন আগে প্রতি শতকে ১০ কেজি গোবর বা হাঁস মুরগীর বিষ্ঠা, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০০ গ্রাম টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে।
- হাঁস দমনে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রতি শতকে ১ মিটার গভীরতার জন্য ৩৫ গ্রাম হারে ডিপটারেক্স অথবা অন্য কোন সহজপ্রাপ্য কিটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
- জাল টেনে পুকুর থেকে মরা সব হাঁস-পোকা সরিয়ে ফেলতে হবে। সরু ফাসের মশারীর জাল টেনে সব কীট দমন করতে হবে।
- হররা টেনে পুকুরের তলার জমে থাকা গ্যাস বের করে দিতে হবে।
৯৫. আতুর পুকুরে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে কি লাভ হয় এবং কীটনাশক প্রয়োগের কতদিন পর পুকুরে রেনু মজুদ করা যায়?- সার প্রয়োগের ফলে আতুর পুকুরে রেনু পোনার প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়
- সার প্রয়োগের ফলে আতুর পুকুরে হাঁস-পোকা ও অপরাপর ক্ষতিকর জলজ কীট মারা যায় তবে রেনু পোনা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। রেনু পোনার মধ্যে খাদ্য গ্রহণের সময় কোন প্রতিযোগিতা হয় না।
- কীটনাশক প্রয়োগের ১-২ দিন পরে আতুর পুকুরে রেনু পোনা মজুদ করা যায়
৯৬.মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনায় কি পদ্ধতিতে রেনু সংগ্রহ ও পরিবহন করা হয়?- আতুর পুকুরে ৪-৫ দিন বয়সের রেনু মজুদ করা হয়
- ঠাণ্ডা ও ছায়ায় রেনু পরিবহন করতে হবে। এ কারণে সকালে অথবা বিকালে পানির কম তাপমাত্রায় রেনু পোনা পরিবহন ও ছাড়ার উপযুক্ত সময়
- দৈর্ঘ্য ৮০ সে.মি. এবং প্রস্থ ৫০ সে.মি. মাপের একটি পলিথিন ব্যাগে ১০০ গ্রাম রেনু ৮-১০ ঘন্টা পর্যন্ত পরিবহন করা যায়
- রেনুসহ পলিব্যাগে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন মিশিয়ে নিতে হবে
- সরকারী ও বেসরকারী হ্যাচারীতে রেনু পোনা পাওয়া যায়
৯৭. রেনু পোনা মজুদের ক্ষেত্রে কি পরিমান ঘনত্ব রাখতে হয়?• রেনু পোনা মজুদে ঘনত্বের পরিমান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কম বেশী হতে পারে। যথাযথ পরিচর্যা করতে পারলে প্রতি শতকে ৫০-১০০ গ্রাম রেনু পোনা মজুদ করা যায়।
৯৮. কোন পদ্ধতিতে রেনু পোনা মজুদ করা হয়?• রেনু পোনা পরিবহনের জন্য যে পলিথিন ব্যাগটি ব্যবহার করা হবে তার অর্ধাংশ আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। এ সময় অল্প অল্প পরিমানে পুকুরের পানি রেনু পোনার ব্যাগের মধ্যে দিতে হবে। পোনাভর্তি পলিব্যাগের পানির তাপমাত্রা ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা সমান হলে পলিব্যাগ কাত করে আস্তে আস্তে পোনা পুকুরে ছাড়তে হবে।
৯৯. রেনু পোনার জন্য উপরি সার কি পরিমান ছাড়তে হবে?• প্লাংটন পোনা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য। পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমানে প্লাংটন উৎপাদনের জন্য রেনু পোনা মজুদের ১ দিন পর থেকে প্রতি শতকে নির্ধারিত হারে সার দিতে হবে। গোবর ২০০-২৫০ গ্রাম অথবা মুরগীর বিষ্ঠা ১৫০-২০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৪-৫ গ্রাম, টিএসপি ২-৩ গ্রাম।
১০০. আতুর পুকুরে সার প্রয়োগের পদ্ধতি কি?• আতুর পুকুরের আয়তন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমান সার কোন পাত্রে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ভালভাবে মিশাতে হবে। মিশানো এসব সার সকাল ৮-৯ টার দিকে সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
১০১. কোন কোন নিয়মে আতুর পুকুরে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করা হয়?- প্রাকৃতিক খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পোনা মজুদের ১ দিন পর থেকে রেনুকে প্রতিদিন সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়। চাউলের মিহি কুঁড়া, সরিষার খৈল, শুটকি মাছের গুড়া ও গবাদিপশুর রক্ত একত্রে মিশিয়ে রেনু পোনার খাদ্য তৈরি করা হয়। উচ্চ বাঁচার হার এবং ভাল দৈহিক বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন পুকুরে নিম্নে বর্ণিত হারে খাদ্য দিতে হবে।
- প্রথম ৫দিন মজুদকৃত পোনার ওজনের ২ গুণ
- দ্বিতীয় ৫দিন মজুদকৃত পোনার ওজনের ৪ গুণ
- তৃতীয় ৫দিন মজুদকৃত পোনার ওজনের ৬ গুণ
- চতুর্থ ৫দিন মজুদকৃত পোনার ওজনের ৮ গুণ
১০২. কোন পদ্ধতিতে খাদ্য প্রয়োগ করা হয়?• চাউলের মিহি কুড়া, সরিষার খৈল, শুটকি মাছের গুড়া ও গবাদিপশুর রক্ত একত্রে মিশিয়ে তৈরী খাদ্য পানির সাথে মিশিয়ে সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিমান খাদ্য দু’ভাগ করে এক ভাগ সকালে এবং অন্য ভাগ বিকেলে ছিটিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
১০৩. আতুর পুকুরে পোনা আহরন পদ্ধতি কি রকম?• ১০২ ও ১০৩ প্রশ্নোত্তরে প্রতিদিন সার ও খাদ্য দিয়ে যত্ন নিলে ২১-২৫ দিনে পোনা ১ ইঞ্চি পরিমান বড় হয় এবং বাঁচার হার ৭৫% পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ অবস্থায় পোনাগুলো প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলান ও পরবর্তী পরিচর্যার লক্ষ্যে লালন পুকুরে স্থানান্তর করতে হয়।
১০৪. আতুর পুকুর ব্যবস্থাপনায় সমম্বয়ের ধরন কি রকম হতে পারে?• মৎস্য চাষ পদ্ধতিতে আতুর পুকুর ব্যবস্থাপনায় পুকুরের উপরে হাঁস মুরগির ঘর তৈরী করা বিধিসম্মত হবে না। কারণ পুকুরের উপরে হাঁস মুরগির ঘর তৈরী করা হলে বিষ্ঠা সরাসরি পানিতে পড়ে এবং পুকুরের তলায় জমা হয়। মজুদ পুকুরে কার্প, মৃগেল, মিররকার্প অথবা এ ধরনের অন্যান্য মাছ বিষ্ঠার ভিতরের আধা হজম খাদ্য গ্রহণ করার সময় বিষ্ঠাগুলো পুকুরের পানিতে মিশে যায়।
১০৫. সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় কি কি সুবিধা এবং অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়?• বিষ্ঠা পানির সাথে মিশে গেলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন হয় এবং পুকুরের পানি দূষিত হয় না। পোনা মাছ এ কাজটি করতে পারে না। এ কারণে আতুর পুকুরের তলায় জমা হওয়া হাঁস মুরগির বিষ্ঠা পচে পানিতে অক্সিজেনের অভাব ঘটাতে পারে এবং এর ফলে সব পোনা মারা যেতে পারে।
১০৬. আতুর পুকুর ব্যবস্থাপনায় হাঁস মুরগির ঘর পুকুরের পাড়ে করতে হয় কেন এবং এ জন্য কি করতে হবে?• ১০৫ নং প্রশ্নোত্তরের শেষাংশে উল্লিখিত কারণে আতুর পুকুর ব্যবস্থাপনায় হাঁস মুরগির ঘর পুকুরের পাড়ে করতে হয়। এ ক্ষেত্রে হাঁস মুরগির ঘর থেকে পরিমিত বিষ্ঠা অথবা গোবর সংগ্রহ করে পানিতে গুলিয়ে নিয়ে পুকুরে ছিটাতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, সাধারণভাবে হাঁস মুরগি যে ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে রেনু পোনা এ ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। এ কারণেও পুকুরের উপরে ঘর তৈরী করা হলে হাঁস মুরগির উচ্ছিষ্ট পুকুরে পড়ে পচন ঘটাতে পার। এ কারণে আতুর পুকুরে বিশেষ খাদ্য দিতে হয়।
লালন পুকুর ব্যবস্থাপনা
১০৭. লালন পুকুরে কোন বয়সী পোনা ছাড়া হয়ে থাকে?• লালন পুকুরে তিন সপ্তাহ বয়সী ধানীপোনা ছেড়ে মজুদ পুকুরে ছাড়ার উপযোগী আঙ্গুঁলে পোনা উৎপাদন করা হয়।
১০৮. লালন পুকুরে আঙ্গুঁলে পোনা উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে কি কি পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে?• লালন পুকুরে আঙ্গুঁলে পোনা উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় নিম্নে লিখিত কৌশলগত কাজ যেমন পুকুর প্রস্তুতি, ধানী পোনা মজুদ, সার প্রয়োগ, খাদ্য সরবরাহ, হররা টানা, নমুনায়ণ, রোগ-বালাই প্রতিরোধ এবং পোনা আহরন ইত্যাদি পদক্ষেপ অনুসরন করতে হবে।
১০৯. মৎস্য খামারে লালন পুকুর কিভাবে প্রস্তুত করতে হয়?• আতুর পুকুর প্রস্তুতের অনুরুপ নিয়মেই লালন পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। পদক্ষেপ ক্রমানুসারে বিষয়সমূহ পাশাপাশি উল্লেখ করা হলঃ পুকুর শুকানো, কাদা অপসারন, আগাছা পরিষ্কার, অবাঞ্চিত ও রাক্ষুসে মাছ অপসারণ, পাড় মেরামত ও তলায় চাষ দেওয়া, চুন প্রয়োগ, সার প্রয়োগ, প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি পরীক্ষা, পানি ও কাদার বিষাক্ততা পরীক্ষা এবং হররা বা জাল টানা।
১১০. লালন পুকুরে ধানীপোনা কিভাবে মজুদ করতে হয়?• সঠিক জাত নির্বাচন করে লালন পুকুরে ধানীপোনা মজুদ করতে হবে। লালন পুকুরে একই সাথে এক জাত বা বিভিন্ন জাতের ধানীপোনা মজুদ করা যায়।
১১১. লালন পকুরে মিশ্র মাছ চাষের ক্ষেত্রে কিভাবে মাছের জাত নির্বাচন করতে হবে?• খাদ্য ও বাসস্থানের প্রয়োজনে যাতে বিভিন্ন জাতের পোনার মধ্য প্রতিযোগিতা না হয় এ কারণেই কাতলা ও বিগহেড অথবা গ্রাসকার্প ও সরপুঁটি একসাথে মজুদ করা যাবে না। আহরন বা বিক্রির সময় পোনা শনাক্তকরণে যাতে কোন বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ কারণে সিলভার কার্প ও বিগহেড কার্প মাছের পোনা একসাথে মজুদ করা সঠিক হবে না।
১১২. লালন পুকুরে মজুদের সময় পোনার ঘনত্ব কি রকম হতে হবে?• সঠিকভাবে প্রস্তুতকৃত লালন পুকুরে প্রতি শতকে ১ ইঞ্চি আকারের সর্বোচ্চ ৩২০০-৪০০০টি হিসেবে পোনা মজুদ করা যেতে পারে। তবে ব্যবস্থাপনার ধরণের পার্থক্য হেতু নির্দিষ্ট সময়ে আঙ্গুঁলে পোনা প্রাপ্তির জন্য প্রতি শতকে ধানীপোনার মজুদের ঘনত্ব কিছুটা তারতম্য করা যেতে পারে।
১১৩. লালন পুকুরে ভাল পোনা কি কি বৈশিষ্ট্যের উপর শনাক্ত করা যায়?• শারিরীক গঠন স্বাভাবিক ও মোটা তাজা বর্ণ, চকচকে রূপালী ও উজ্জ্বল, চলাফেরায় চটপটে, দলবেঁধে চলে, ত্বক পিচ্ছিল, পাত্রে আঙ্গুঁল দিলে দ্রুত সরে যায় এসব বৈশিষ্ট্যের উপর ভাল পোনা শনাক্ত করা যায়।
১১৪. নিম্ন মানের পোনা চেনার উপায় কি কি হতে পারে?• শারিরীক গঠন–মাথা মোটা ও দেহ চিকন, বর্ণ ফ্যাকাশে, চলাফেরায় ধীরস্থির ও বিচ্ছিন্নভাবে, ত্বক খসখসে এবং পাত্রে আঙ্গুঁল দিলে আস্তে আস্তে সরে যাবে এসব বৈশিষ্ট্যের উপর নিম্ন মানের পোনা শনাক্ত করা যায়।
১১৫. লালন পুকুরে ছাড়ার আগে কিভাবে পোনা পরিবহন ও পুকুরে ছাড়তে হবে?• অক্সিজেন ব্যাগ, মাটির হাড়ি অথবা ড্রামে পোনা পরিবহন করা যাবে। পরিবহনের পাত্রে ভিজা কোন ন্যাকড়া দ্বারা জড়িয়ে বাক্সের ভিতরে পরিবহন করা উচিৎ। পরিবহনকৃত পোনা সকালে অথবা বিকালে পুকুরের পানির তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে ছাড়তে হবে। অক্সিজেনযোগে প্রতি লিটার পানিতে ৩০–৪০টি পোনা পরিবহন করা যাবে।
১১৬. লালন পুকুরে কিভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে?• পুকুরের পাড় হতে হাঁস মুরগীর বিষ্ঠা সংগ্রহ করে আতুর পুকুরের ঠিক একই নিয়মে লালন পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে। আতুর ও লালন পুকুর উভয় ক্ষেত্রেই বিভিন্ন স্থানের মাটির উর্বরতার উপর ভিত্তি করে সারের মাত্রা কিছুটা কম বেশি হতে পারে।
১১৭. লালন পুকুরে পোনার জন্য কোন নিয়মে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হবে?• আতুর পুকুরের অনুরূপ এক্ষেত্রেও লালন পুকুরের উপর সাধারণত ঘর করে হাঁস মুরগী পালন করা হয় না। এ কারণে বাহির থেকে নিয়মিত সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে। চালের মিহি কুঁড়া, সরিষা অথবা তিলের খৈল এবং গবাদিপশু ও হাঁস মুরগীর রক্ত একত্রে মিশিয়ে লালন পুকুরে পোনার সম্পূরক খাদ্য তৈরি করা হয়। সাধারণ নিয়মে প্রতিদিনই পোনার দৈহিক ওজনের ৫–১০% হারে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। পুকুরে গ্রাসকার্পের ধানী পোনা মজুদ করা হলে নিয়মিতভাবে ক্ষুদে পোনা দিতে হবে।
১১৮. লালন পুকুরে হররা টানার উপকারিতা কি?• লালন পুকুরে পোনা মজুদের পর মাঝে মধ্যে হররা টানলে পুকুরের তলায় জমা হওয়া ক্ষতিকর গ্যাস বের হয়ে যায়।
১১৯. লালন পুকুরে মজুদকৃত পোনার কিভাবে নমুনায়ণ করা হয়?• প্রতি মাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নমুনায়ণ করা হয়।
১২০. লালন পুকুরে কিভাবে মজুদকৃত পোনার নমুনায়ণ করা হয়?• প্রতি ২-৩ সপ্তাহ পর পর মজুদকৃত পোনার ৫-১০ শতাংশ নমুনায়ণ করতে হবে। নমুনায়ণের মাধ্যমে সরবরাহকৃত খাদ্যের পরিবর্তন হার ৩ শতাংশের নিচে থাকা প্রয়োজন। খাদ্যের পরিবর্তন হার বেড়ে গেলে বুঝা যাবে যে, পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের ঘাটতি অথবা ব্যবস্থাপনাগত কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে।
১২১. লালন পুকুরে পোনার সাধারণত কি কি রোগবালাই হতে পারে?• লালন পুকুরে বিভিন্ন ধরনের এককোষী বাহ্যিক পরজী্বি, উকুন, ফুলকা পচা, পাখনা পচা প্রভৃতি রোগের বিস্তার ঘটতে পারে। ব্যাকটেরিয়া-ঘটিত রোগ প্রতিরোধে প্রতি শতক প্রতি ফুট পানির জন্য ১.২ গ্রাম হারে ম্যালাকাইট গ্রীন অথবা অন্য যেকোন সহজপ্রাপ্য ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ প্রতিরোধের ঔষধ এবং উকুন প্রতিরোধে ১২ গ্রাম হারে ডিপটারেক্স ব্যবহার করতে হবে।
১২২. লালন পুকুর থেকে কিভাবে পোনা আহরন করতে হবে?• পোনার আকার ৭-১০ সে.মি. হলে পোনা বিক্রি শুরু করা যাবে। ৭-১০ সে.মি. আকারে পৌছাতে ৪০-৬০ দিন সময় লাগে। ধরার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে জালের ঘষায় পোনা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। ধরার পর কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা পোনাকে হাপার মধ্যে রেখে সহনশীল করে পরে পরিবহন করতে হবে। এ রকম ব্যবস্থাপনায় পোনার মৃত্যুর হার কম হতে পারে। পোনাকে জীবাণুমুক্ত রাখার প্রয়োজনে প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম লবণ দিয়ে পানিতে পোনা পরিবহন করা যেতে পারে।
১২৩. লালন পুকুরে কোন পদ্ধতিতে পোনার সমম্বয় সাধন করা হয়?• পোনা মাছের জীবনচক্র বেশ নাজুক থাকে। এমন অবস্থায় অক্সিজেনের অভাবে পুকুরে পোনা মাছ দ্রুত মারা যেতে পারে। এমনতর পরিস্থিতিতে লালন পুকুরের উপর ঘর তৈরি করে হাঁস মুরগী পালন করলে বা অতিরিক্ত মাত্রায় পশুপাখির মল প্রয়োগ করলে পুকুরে নিলাভ সবুজ শেওলার ব্লুম তৈরী হয়। কারণ, পশুপাখির মলে প্রচুর পরিমানে নাইট্রোজেন থাকে এবং নাইট্রোজেন পুকুরে পুণঃ চক্রায়িত হয়। এ ধরনের নিলাভ সবুজ শেওলার ব্লুম লালন পুকুরে পোনার ব্যাপক মড়ক ঘটাতে পারে।
১২৪. ব্লুমের কারণে মাছের পোনা কিভাবে মারা যায়?- পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের স্বল্পতা বা অতি সম্পৃক্ততা দেখা গেলে
- পশুপাখির মল পচনের সময় হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস অবমুক্ত হওয়ায়
- বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় পানিতে বিষাক্ত পদার্থের সৃষ্টি হওয়াতে
- যেসব কারণে লালন পুকুরের ক্ষেত্রে পুকুর পাড়ে পশুপাখি পালন করা হয় তাদের মলমূত্র প্রয়োজনীয় পরিমানে প্রয়োগ করে সুষ্ঠু ও সমম্বিত ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনা
১২৫. সমন্বিত মৎস্য খামারের মজুদ পুকুর বলতে কোন পুকুরকে বুঝায়?• সমন্বিত মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনায় যে পকুরে সাধারণত ৬-১০ সে.মি. আকারের পোনা (আঙ্গুঁলে পোনা) ছেড়ে পূর্ণ বয়ষ্ক বা বাজারজাতকরণের উপযোগী মাছ উৎপাদন করা হয় তাকে মজুদ পুকুর বলা হয়।
১২৬. মজুদ পুকুরের আয়তন ও গভীরতা কি পরিমাণ হওয়া দরকার?• মজুদ পুকুর আয়তনে কিছুটা বড় এবং গভীরতা অপেক্ষাকৃত বেশি। সব সময়ই ৩০ শতকের বেশি আয়তনের জলাশয় মজুদ পুকুর হিসেবে উপযোগী তবে এর চেয়ে ছোট আয়তনের জলাশয়ও মজুদ পুকুর হিসেবে ব্যবহার কারা যায়। মজুদ পুকুরে পানির গভীরতা ১.৫-২.৫ মিটার হলে ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয়।
১২৭. মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বলতে কোন ব্যবস্থাপনাকে বুঝায়?• মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনা বলতে আঙ্গুঁলে পোনা পালনের জন্য পুকুর নির্বাচন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণের উপযোগী মাছ আহরণ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সকল মৎস্য চাষ কার্যক্রমকে বুঝায়।
১২৮. মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনায় কি কি পদক্ষেপ নিতে হয়?• মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপগুলো হলঃ পুকুর নির্বাচন, পুকুর প্রস্তুতকরণ, পোনা মজুদকরণ, পানির গুণাগুণ নিয়ন্ত্র্ণ, গ্রাসকার্পের খাদ্য সরবরাহ, প্লাংটন ব্লুম নিয়ন্ত্রণ এবং মাছের আংশিক আহরণ।
১২৯. সাধারণ মাছ চাষ ব্যবস্থা এবং সমন্বিত মৎস্য চাষ করার ক্ষেত্রে মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনায় পার্থক্য কতটা?• সমন্বিত মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনায় মাছ চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন যুগপৎভাবে এগিয়ে চলে। এক্ষেত্রে মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনা সাধারণ মাছ চাষের প্রায় অনুরুপ।
১৩০. মজুদ পুকুরের উপযোগী আয়তন কতটুকু হতে হবে?• সাধারণত ৩০ শতক থেকে এক একর আয়তনের পুকুর মজুদ পুকুর হিসেবে অধিকতর উপযোগী হবে। এক্ষেত্রে ১০ শতক থেকে বেশি আয়তনের মৌসুমী পুকুরেও সমন্বিত মাছ চাষ করা চলে।
১৩১. মৎস্য খামারে মজুদ পুকুর প্রস্তুতি বলতে পুকুরের কী ধরণের প্রস্তুতিকে বুঝায়?• মজুদ পুকুর প্রস্তুতি বলতে পুকুরের পারিপার্শ্বিক অবস্থার উন্নয়ন, পুকুর থেকে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ এবং ক্ষতিকা্রক প্রাণী অপসারণ, পানি শোধন ও পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে বুঝায়।
১৩২. মৎস্য খামারে পুকুর ব্যবস্থাপনায় সতর্কতামূলক কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে?• পুকুরের সঠিক প্রস্তুতির উপর মাছ চাষের সার্বিক সফলতা নির্ভর করে বিধায় পুকুরের পাড়-ভাঙ্গাঁ থাকলে তা প্রথমেই মেরামত করতে হবে। বর্ষার প্লাবন রোধ করার জন্য পাড় যথাযথভাবে উচুঁ করতে হবে। পুকুরে জলজ আগাছা থাকলে তা শিকড়সহ তুলে ফেলতে হবে।
১৩৩. রাক্ষুসে এবং অবাঞ্চিত মাছ বলতে কোন কোন মাছগুলোকে বুঝায়?• শোল, বোয়াল, টাকি, গজার, আইড়, ফলি প্রভৃতি মাছকে রাক্ষুসে এবং মলা, পুটি, দাঁড়কিনা, চান্দা, চাপিলা, চেলা, বাইলা, ঢেলা প্রভৃতি মাছকে অবাঞ্চিত মাছ বলা হয়।
১৩৪. রাক্ষুসে এবং অবাঞ্চিত মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণী মাছ চাষে কি ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে?• রাক্ষুসে এবং অবাঞ্চিত মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণী পোনা মাছ এবং মাছের খাদ্য খেয়ে ফেলে।
১৩৫. মাছ চাষের ক্ষতিকর মাছ ও প্রাণী কিভাবে দূর করা যাবে?• পুকুর শুকিয়ে রাক্ষুসে এবং অবাঞ্চিত মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণী দূর করতে হবে। পুকুর শুকানোর সুযোগ না থাকলে জাল টেনে অথবা ঔষধ প্রয়োগ করে এ ধরণের ক্ষতিকর মাছ ও প্রাণী অপসারণ করতে হবে।
১৩৬. রাক্ষুসে মাছ, অবাঞ্চিত মাছ এবং ক্ষতিকর প্রাণী দূর করার জন্য কি ধরনের ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে?• প্রতি শতকে প্রতি ফুট পানির জন্য ৩০-৩৫ গ্রাম হারে রোটেনন বা ৩ গ্রাম হারে ফসটক্সিন প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়াও বর্তমানে সহজপ্রাপ্য অন্যান্য ওষুধ পাওয়া যায় যেগুলো দ্বারা রাক্ষুসে মাছ, অবাঞ্চিত মাছ এবং ক্ষতিকর প্রাণী দূর করা যাবে।
১৩৭. স্বল্প ব্যয়ে সহজপ্রাপ্য কি কি ভেষজ ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে?• চা-বীজের খৈল এবং মহুয়ার খৈল প্রয়োগ করে রাক্ষুসে মাছ, অবাঞ্চিত মাছ এবং ক্ষতিকর প্রাণী দূর করা যাবে।
১৩৮. ক্ষতিকর মাছ এবং প্রাণী দূর করার পর কি করতে হবে?• মজুদ পুকুরে প্রতি শতকে ১ কেজি হারে কলিচুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন পানি শোধন করে বিধায় চুন দেয়ার ৭ দিন পরে পুকুরের উপরে তৈরী করা ঘরে মুরগীর বাচ্চা ছাড়তে হবে। মুরগীর বাচ্চা ছাড়ার ৭-১০ দিন পর পুকুরে মাছের পোনা ছাড়তে হবে। পোনা ছাড়ার আগে মুরগীর বাচ্চা না দেয়া গেলে সার প্রয়োগ করার পর পর পোনা ছাড়তে হবে।
১৩৯. মজুদ পুকুরে কিভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে?• চুন দেয়ার ৩-৪ দিন পর প্রতি শতকে ১২-১৬ কেজি হারে গোবর দিতে হবে। পোনা মজুদের ৪-৫ দিন আগে প্রতি শতকে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার ১ সপ্তাহ পর পোনা মজুদ করতে হবে।
১৪০. মজুদ পুকুরে কি জাতের পোনা মাছ নির্বাচন করতে হবে?• মাছ ও মুরগীর সমন্বিত চাষে পুকুরে এমন কতগুলো পোনা ছাড়তে হবে যেগুলো খাদ্য গ্রহণে বিভিন্ন স্তরের মাছের সাথে প্রতিযোগিতা করে না এবং পুকুরে উৎপন্ন প্রাকৃতিক খাদ্য স্বাচ্ছন্দে গ্রহণ করে। পুকুরের তলা থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এমন সব জাতের মাছ অবশ্যই পুকুরে ছাড়তে হবে। যে পুকুরের পানির উপরে ঘর করে মুরগী পালন করা হয় তার তলায় প্রচুর পরিমাণ মাছের খাদ্য জমা হয়। বিভিন্ন জাতের মাছ ছাড়লে পুকুরের পানির সকল স্তরে উৎপন্ন খাদ্যের সদ্ব্যবহার হয়। এর ফলে মৎস্য চাষে অধিক হারে উৎপাদন পাওয়া যায়।
১৪১. মজুদ পুকুরের কোন স্তরে কি কি ধরণের মাছের পোনা মজুদ করতে হবে এবং কেন?• মৃগেল, কার্প ও মিররকার্প মাছ ছাড়লে এরা পুকুরের তলার খাদ্য খাবে, একই সাথে মাটি নাড়াচাড়া করবে এবং তলায় জমে থাকা সার পানিতে মিশিয়ে দেবে। ফলে পানির উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যাবে। পানির উপরের স্তরের জন্য কাতলা ও সিলভার কার্প এবং মধ্য স্তরের জন্য রুইমাছ ছাড়তে হবে। সাধারনত পুকুরে কিছু কিছু জলজ আগাছা জন্মায়। এ আগাছাগুলো নিয়ন্ত্রনের স্বার্থে পুকুরে অল্প সংখ্যক গ্রাসকার্পের পোনা ছাড়তে হবে।
১৪২. আকারানুসারে পোনা ছাড়ার হার কি রকম হতে পারে?• মাছের সামগ্রীক দৈহিক বৃদ্ধি নির্ভর করে পোনার প্রাথমিক আকৃতির উপর। বড় পোনা অপেক্ষা ছোট পোনার মৃত্যুর হার বেশি। মজুদ পুকুরে ৬-১২ সে.মি. আকারের পোনা মাছ ছাড়া উচিৎ। সমন্বিত মৎস্য চাষে রুই-জাতীয় মাছের ৭-৮ জাতের পোনা মাছ প্রতি শতকে ৩৫-৪০টি পর্যন্ত মজুদ করা যায়।
১৪৩. মাছ চাষে এক বছরে মাছের ওজন কি পরিমাণ হতে পারে?• রুই, কাতলা, মৃগেল প্রতিটি ৮-১২ মাসে ০.৭-১.৫ কেজি, সিলভারকার্প, মিররকার্প, গ্রাসকার্প প্রতিটি ১-১.৫ কেজি ওজনের হতে পারে।
১৪৪. মৎস্য চাষে মজুদ পুকুরে সার প্রয়োগ করার নিয়ম কি হতে পারে?/span>• সাধারণভাবে সমন্বিত মৎস্য ও হাঁস মুরগি চাষে হাঁস মুরগির ঘর পুকুরের পানির উপর করা হয়। এক্ষেত্রে ঘরের মেঝে এমনভাবে তৈরী করতে হবে যাতে বিষ্ঠা সরাসরি পানিতে পড়ে। এতে বিষ্ঠার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার হয় এবং বিষ্ঠা পরিষ্কারের জন্য কোন শ্রমের দরকার হয় না।
১৪৫. মৎস্য খামারে মজুদ পুকুরের পানির গুণাগুণ রক্ষনাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কি?• মাছ চাষে মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনায় পানির গুণাগুণ নিয়ন্ত্রন করার ক্ষেত্রে পুকুরের সবুজ শেওলা ও ব্যাকটেরিয়ার বর্ণ ও স্বচ্ছতার ধরন ও প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতায় পুকুরের উপযোগিতার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয়।
১৪৬. সমন্বিত মাছ চাষে হাঁস মুরগি পালিত পুকুরের উৎপাদন উপযোগিতা কিভাবে নির্ধারন করা যেতে পারে?

প্রতি লিটার পানিতে প্লাংকটন পানির স্বচ্ছতা (সে.মি.) উপযোগিতা২০-৫০ মি.গ্রা. ৩০-৪০ উপযোগী৫০-১০০ মি.গ্রা. ২৫-৩০ উপযোগী১০০-৪০০ মি.গ্রা. ২০-২৫ অধিক উপযোগী৪০০ এর বেশি ১৫ এর বেশি অতিরিক্ত ‌উর্বর উপযোগী নয়
১৪৭. মাছ ও হাঁস মুরগি চাষে পানিতে কি কি ধরনের অক্সিজেন থাকে?• পানিতে দ্রবীভূত এবং জৈব রাসায়নিক অক্সিজেন থাকে যার প্রয়োজনীয়তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা দরকার। পুকুরের তলায় হাঁস মুরগির বিষ্ঠা জমা থাকে। ফলে পুকুরে হঠাৎ অক্সিজেনের অভাব হতে পারে। অতিমাত্রায় ক্ষতিকর গ্যাস তৈরি হতে পারে এবং অধিক হারে মাছ মারা যেতে পারে।
১৪৮. মাছের সুষ্ঠু জীবন যাপনের জন্য পানিতে কি পরিমান অক্সিজেন থাকা দরকার?• মাছের সুষ্ঠু জীবন যাপন ও নিয়মিত দৈহিক বৃদ্ধির জন্য পানিতে ৫-৮ নিযুতাংশ হারে অক্সিজেন থাকা দরকার। এজন্য সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় পুকুরের আশেপাশে ভাল পানির উৎস থাকা আবশ্যক।
১৪৯. মৎস খামারের মজুদ পুকুরে পানির সাধারন ব্যবস্থাপনায় কি করতে হবে?• মাছ চাষের পুকুরে মাঝে মাঝে হররা টেনে পুকুরের তলায় জমা বিষ্ঠাকে পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। ফলে পুকুরে পরিমিত প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদিত হয়, দ্রবীভূত অক্সিজেন পরিমিত মাত্রায় থাকে এবং ক্ষতিকর গ্যাস তৈরী হতে পারে না বা কোন গ্যাস জমা হয়ে থাকলে তা বের হয়ে যায়।
১৫০. মৎস চাষের পুকুরের পানির গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য অতি সহজে কি করা যেতে পারে?• পানির গুণাগুণ সঠিক রাখার জন্য সমন্বিত মাছ চাষের পুকুরে প্রতি ৩-৪ মাস পর পর প্রতি শতকে আধা কেজি হারে কলিচুন প্রয়োগ করতে হবে।
১৫১. মৎস চাষের ক্ষেত্রে গ্রাসকার্প মাছের খাদ্য কিভাবে সরবরাহ করতে হবে?• মাছ চাষে রুই-জাতীয় মাছের জন্য সাধারনত কোন খাদ্য দেয়া হয় না। গ্রাসকার্প ঘাস-জাতীয় খাদ্য খায় বিধায় পুকুরে নিয়মিত সবুজ ঘাস দিতে হবে। এজন্য মজুদ পুকুর পাড়ে নেপিয়ার ঘাস লাগালে পুষ্টি সরবরাহে উপকার পাওয়া যায়। গ্রাসকার্পের দৈহিক সঠিক বৃদ্ধির জন্য দেহের ওজনের ১০-২০ ভাগ হারে প্রতিদিন খাদ্য দিতে হবে।
১৫২. মৎস্য চাষে মজুদ পুকুরের পরিচর্যা কি রকম হওয়া দরকার?• খামারে মাছের স্বাস্থ্য, দৈহিক বৃদ্ধি ও রোগবালাই পরীক্ষার জন্য প্রতি মাসে একবার জাল টেনে মাছ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সমন্বিত চাষের পুকুরে প্লাংটন ব্লুম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে পূর্বের প্রশ্নোত্তরে বর্নিত পদ্ধতিতে প্লাংটন ব্লুম নিয়ন্ত্রন করতে হবে। পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
১৫৩. মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনায় মাছের বৃদ্ধি পরীক্ষার প্রয়োজন কি?• জলজ বাস্তুসংস্থান পরিবেশের ভিন্ন প্রকৃতির অসংখ্য প্রানী, উদ্ভিদ ও জড় বস্তু ধারা গঠিত বিধায় জলজ পরিবেশের বাস্তুসংস্থান অপেক্ষাকৃত জটিল এবং অস্থিতিশীল। পানির বিভিন্ন নিয়ামকের মাত্রা সব সময় পরিবর্তিত হয়ে থাকে যা মাছের বৃদ্ধিকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এ কারণে মাছের দৈহিক বৃদ্ধির হা্র এবং সংখ্যা পরীক্ষা করার দরকার হয়।
১৫৪. মৎস্য খামারে মাছের দৈহিক বৃদ্ধি সমান হারে হয় কি?• মাছের পূর্ণ জীবন চক্রের বিভিন্ন স্তরে দৈহিক বৃদ্ধি সমান হারে হয় না। অন্যান্য প্রানীর অনুরূপ মাছেরও জীবনের বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধির হা্র বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এ কারণে কাংখিত মুনাফা অর্জনের জন্য মাছের সুস্বাস্থ্য এবং যথাযথ দৈহিক বৃদ্ধি্র পরীক্ষা করা অত্যাবশ্যক। মাছের দৈহিক বৃদ্ধির সঠিক পর্যবেক্ষণ হল- ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পর্যায়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১৫৫. মাছের দৈহিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যগুলো কি?- সুষ্ঠুভাবে মৎস্য চাষ কার্যক্রম পরিচালনা করা
- উৎপাদন উপকরণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ
- মৎস্য চাষের একক ক্ষেত্র থেকে অধিক উৎপাদন করা
১৫৬. মৎস্য খামারে মাছের নমুনায়ণের প্রয়োজন হয় কেন?• মাছের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য পুকুরের পানির পরিবেশ ও প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। নমুনায়ণের মাধ্যমে মাছের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যায়। পুকুরের পানিতে ঝাকি জাল এবং বেড় জাল টেনে মাছ ধরে নমুনায়ণ করা হয়। সঠিক নমুনায়ণের প্রয়োজনে মাছের মোট সংখ্যার ৫-১০% মাছ ধরে নমুনায়ণ করা প্রয়োজন। নমুনায়ণের সময় মাছের দৈর্ঘ্য এবং ওজন পর্যবেক্ষণ করা হয়।
১৫৭. মৎস্য চাষের পুকুরে পরিমিত খাদ্য না পেলে মাছের কি সমস্যা হবে?• পানিতে পরিমিত খাদ্য না পেলে মাছের দেহের বিভিন্ন অংশের আনুপাতিক বৃদ্ধির হার সঠিক মাত্রায় থাকে না। এ অবস্থায় মাথার সাথে দেহের বাকি অংশ বেমানান হয়ে যায় এবং দেহের তুলনায় মাথা বড় হয়ে যায়। বিক্রির সময় গ্রাহক অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের মাছ পছন্দ করে না।
১৫৮. মাছের দৈহিক বৃদ্ধি পরীক্ষার সময় কোন বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে?- মাছের দেহের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা আছে কিনা
- দৈহিক অঙ্গের আকারগত অনুপাত সঠিক আছে কিনা
- দেহের তুলনায় মাথা বড় দেখা যায় কিনা
- মাছের কোন অঙ্গের বিকৃতি, ক্ষত বা দেহে কোন পরজীবি আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে হবে
১৫৯. মৎস্য খামারে মাছের সুষম দৈহিক বৃদ্ধি রক্ষা করা যায় কিভাবে?• মাছ পানিতে বসবাস করে বিধায় কৃষি ফসল বা গবাদি পশুপাখির মত মাছের বৃদ্ধি সার্বক্ষণিকভাবে লক্ষ্য করা যায় না। এমন প্রেক্ষাপটে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার আগেই জানা থাকা দরকার।
১৬০. ১৫৯ নং প্রশ্নোত্তর মোতাবেক স্বাভাবিক জলজ পরিবেশে রুই-জাতীয় মাছের মাসিক বৃদ্ধির হার কি রকম হতে পারে?• জলজ পরিবেশে রুই-জাতীয় মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার প্রতি মাসে নিম্নরূপ হতে পারেঃ

মাছের জাত প্রতি মাসে বৃদ্ধির হার(গ্রাম) সিলভারকার্প ৬০-১৫০ কাতলা ৩০-৯০ রুই ৩০-৬০ গ্রাসকার্প ৬০-১৫০ মৃগেল ৩০-৬০ মিররকার্প ৬০-১২০ সরপুটি ২০-৪৫
১৬১. মাছের বৃদ্ধির হার নির্দিষ্ট বয়সের পর কি মাত্রায় কমতে পারে?• মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনায় মাছ ও হাঁস মুরগী পালনে রুই-জাতীয় মাছের ৬ মাসে ও এক বছরে সম্ভাব্য ওজন বৃদ্ধির হার নিম্নরূপ হতে পারেঃ

মাছের জাত ৬ মাসে সম্ভাব্য ওজন (গ্রাম) এক বছরে সম্ভাব্য ওজন (কেজি)কাতলা ৪০০-৫০০ ১.০সিলভারকার্প ৫০০-৬০০ ১.০-১.৫রুই ৩০০-৪০০ ০.৮০০মৃগেল ৩০০-৪০০ ০.৮০০মিররকার্প ৫০০-১০০০ ১.৫-২.০গ্রাসকার্প ৮০০-৯০০ ১.৫-২.০রাজপুটি ১৫০-২০০ ০.৩৫০
১৬২. মৎস্য চাষে নমুনায়ণের পদ্ধতি কি রকম হতে পারে?• বেড়জালে মাছ ধরে বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন আকারের নির্দিষ্ট সংখ্যক মাছের ওজন নিতে হবে। এক মাস পরে আবারও সমান সংখ্যক মাছের ওজন নিয়ে পূর্বের ওজন থেকে পার্থক্য বের করতে হবে।
১৬৩. নমুনাকরণের সময়ের মাছের ধকল/পীড়ন কিভাবে কমানো যাবে?• নমুনাকরণের সময়ে ধরা মাছ ৫০০ নিযুতাংশ পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট দ্রবণে কয়েক সেকেন্ড ডুবিয়ে রেখে পুকুরে ছাড়লে ধকলজনিত বা পীড়নের কারণে কোন ক্ষতি হয় না এবং এতে মাছের রাসায়নিক প্রতিরোধ সৃষ্টি হয়, সাধারন রোগবালাই প্রতিরোধ হয়। কৃত্রিমভাবে রাসায়নিক প্রতিরোধ সৃষ্টির জন্য ২-৩% খাদ্য লবণের দ্রবণ পানিতে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
১৬৪. সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় মাছ, মুরগি ও হাঁস চাষে কি রকম গুরুত্ব বহন করে?• বর্ধিঞ্চু জনসংখ্যার অপ্রতুল খাদ্যের সমস্যা সমাধানে জমির স্বপ্লতা ও মৎস্য খাদ্যের অপ্রতুলতা দূর ও বাড়তি আয় করার প্রয়াসে একই জায়গায় মাছ, মুরগি এবং মাছ ও হাঁসের সমন্বিত চাষের গুরুত্ব অপরিসীম।
১৬৫. বর্তমান আবাদী ও অনাবাদী জমির পরিমানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সমন্বিত মাছ, মুরগি ও হাঁস চাষের সম্ভাবনা কিভাবে নিরুপন করা যাবে?• বাংলাদেশে হাঁস মুরগি চাষের পারিবারিক ঐতিহ্য ও প্রচেষ্টা এখনো চলমান আছে এবং অনেক এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পুকুর বিদ্যমান। সমন্বিত হাঁস মুরগি ও মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনায় এসব প্রানীর বিষ্ঠা যথার্থ পরিমানে পুকুরে প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বেকার সমস্যা হ্রাস করা সম্ভব। সমন্বিত হাঁস ও মৎস্য চাষ পদ্ধতিতে হাঁসকে যে পরিমান খাবার সরবরাহ করা হয় তারই উচ্ছিষ্ট অংশ বা হাঁসের বিষ্ঠা থেকে বাড়তি আর কোন খাবার প্রয়োগ করা ছাড়াই পুকুরে আশানুরূপ মাছ উৎপাদন করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।
১৬৬. সমন্বিত মাছ, মুরগি ও হাঁসের চাষে কি কি সুবিধা আশা করা যায়?• ব্যবহৃত জমিতে একই ব্যবস্থাপনায় মাছ মাংস ও ডিম উৎপাদন করে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এ কারণেই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টির চাহিদা পূরণ, জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বেকার জনসংখ্যার আর্থকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মাছ, মুরগি ও হাঁসের সমন্বিত চাষ সম্পর্কে ধারনা থাকা দরকার।
১৬৭. সমন্বিত মাছ, মুরগি ও হাঁস চাষের ব্যবস্থাপনায় কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে?• মাছ, মুরগি ও হাঁসের জাত নির্বাচন, আনুপাতিক হার নির্ধারণ, মুরগি ও হাঁসের ঘর তৈরীকরণ ও স্থাপন, মাছ ও মুরগির সমন্বিত চাষের ব্যবস্থাপনা কৌশল, মুরগি ও হাঁসের সমন্বিত চাষের কলাকৌশল এবং মাছ পর্যায় পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৬৮. সমন্বিত মাছ চাষের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ও জাতের মাছ, হাঁস ও মুরগি নির্বাচন করতে হবে?• যে সব জাতের মাছ, হাঁস ও মুরগির দৈহিক বৃদ্ধি বেশি এবং ডিম দেয় সাধারনত সেগুলোই নির্বাচন করতে হবে।
১৬৯. সমন্বিত মাছ চাষের ক্ষেত্রে কোন জাত বা ধরনের মাছ নির্বাচন করতে হবে?• সমন্বিত মাছ চাষে এমন জাতের মাছ নির্বাচন করতে হবে যেগুলো খাদ্য গ্রহণের জন্য পুকুরে বা জলাশয়ের বিভিন্ন স্তরের মাছের সাথে প্রতিযোগিতা করে না এবং পুকুরে উৎপাদিত খাদ্য স্বাচ্ছন্দে গ্রহণ করে।
১৭০. সমন্বিত মৎস্য খামারে মুরগির বাচ্চার ব্রুডার ঘর কিভাবে প্রস্তুত করতে হয়?• সহজপ্রাপ্য ও উপযোগী জীবাণুনাশক দ্বারা ঘর ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে একদিন ফেলে রেখে মেঝে শুকাতে হবে। পরিষ্কার করার পর বিছানা(লিটার)হিসেবে তূষ বা কাঠের গুড়া ১.৫-২.০ ইঞ্চি পুরু করে মেঝেতে বিছাতে হবে। বাচ্চার লিটার জীবাণুনাশক ব্যবহার করার জন্য লিটারের উপর চুন বা সামান্য পরিমান ফরমালিন ছিটিয়ে দিতে হবে।
১৭১. সমন্বিত মৎস্য ও মুরগি চাষ পদ্ধতিতে কত সময়ে, কত ওজনের ব্রয়লার উৎপাদন করা যেতে পারে?• সমন্বিত চাষ পদ্ধতিতে ৭-৮ সপ্তাহে ১.৫-২.০ কেজি ওজনের ব্রয়লার উৎপাদন করা সম্ভব যার জন্য প্রতি কেজিতে ২.৪ কেজি খাদ্যের দরকার হয়।
১৭২. একই পুকুরে বছরে কত ব্যাচে ব্রয়লার লালন করা যেতে পারে?• প্রতি বছর মোট ৬ ব্যাচে ১২০০টি ব্রয়লার পালন করা যেতে পারে যেখানে মৃত্যুর হার ১-৫ শতাংশ হতে পারে।
১৭৩. সমন্বিতভাবে চাষ করে কি পরিমান মাছ উৎপাদন করা সম্ভব?• কোন প্রকার সার ও খাদ্য সরবরাহ ছাড়াই প্রতি একর থেকে ১৮০০-২১০০ কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হতে পারে।
১৭৪. মাছ ও হাঁসের সমন্বিত চাষ পদ্ধতিতে মাছের প্রাকৃ্তিক খাদ্য ও পানির পরীক্ষা কখন করতে হবে?• পুকুরে পোনা মাছ ছাড়ার সাথে সাথেই মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য এবং পানির গুণাগুণ পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ, মাছের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সকল ব্যবস্থা কার্যকরী করতে হবে।
১৭৫. পুকুরের পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমান কিভাবে পরীক্ষা করতে হয়?• মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করার জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, একটি বোতলে সামান্য পরিমান পানি নিয়ে ও অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পুকুর বা জলাশয়ের প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমান নির্ধারন করা যায়। এ ছাড়াও সেকি ডিক্স দিয়ে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাপ করা যায়। সেকি ডিস্ক যাহা দেখতে গোলাকার থালার মত। এর উপরের পিঠে সাদা-কালো রং থাকে এবং একটি সূতা বা স্কেল দ্বারা সেকি ডিস্কটি ঝুলানো থাকে। সেকি ডিস্ককে পানিতে ১২ ইঞ্চি ডুবানোর পর যদি সেকি ডিস্ক দেখা না যায় তাহলে বুঝতে হবে পানিতে পর্যাপ্ত পরিমানে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে।
১৭৬. পুকুরের পানির গুণাগুণ কিভাবে পরীক্ষা করা যায়?• পানির অক্সিজেন, পিএইচ, তাপমাত্রা ইত্যাদি নির্ণয় করে পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করা যায়।
১৭৭. মাছের সাথে হাঁস পালনের ক্ষেত্রে মাছের বৃ্দ্ধি, স্বাস্থ্য এবং রোগবালাই কিভাবে এবং কখন পরীক্ষা করা যায়?• মাছের স্বাভাবিক বৃ্দ্ধি, স্বাস্থ্য এবং রোগবালাই পরীক্ষা করার জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার পুকুরে জাল টেনে ভালভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
১৭৮. সমন্বিত মাছ ও হাঁস চাষের ক্ষেত্রে পুকুরের পানির গুণাগুণ কিভাবে রক্ষা করতে হবে?• পুকুরে পানির গুণাগুণ যথাযথ মাত্রার জন্য ৩-৪ মাস পর পর প্রতি শতক জলায়তনে ০.৫ কেজি হারে কলিচুন প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
১৭৯. মাছের সাথে হাঁসের চাষ পদ্ধতিতে মাছ ধরা এবং বিক্রির সময় কখন হতে পারে?• জীবন চক্রের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাছের দ্রূত দৈহিক বৃ্দ্ধিপ্রাপ্ত হয়। তাই জাত এবং দৈহিক বৃ্দ্ধির উপযোগী সময় বিবেচনা করে মাছ ধরতে হবে এবং লাভজনক অবস্থায় বাজারজাত করতে হবে। পরবর্তী সময়ে পুকুরে মাছের পোনা ও হাঁসের বাচ্চা পালনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৮০. সমন্বিত মাছ ও হাঁস পালনের ব্যবস্থাপনায় প্রায়োগিক বিবেচ্য সময় কখন?• হাঁসকে সহজেই পোষ মানানো যায়। এ কারণে যেকোন সাধারন পরিস্থিতিতে হাঁস পালন তুলনামূলকভাবে অনেকটা সহজ। আমাদের দেশে চৈত্রের শেষ থেকে জৈষ্ঠ্যের প্রথম দিকে হাঁসের বাচ্চা ফুটানো এবং পালন করা যায়।
১৮১. মাছ চাষে সমন্বিত পদ্ধতিতে হাঁসের জন্য কি পরিমানে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে?• খোলামেলা জলাশয়ে কিছু জলজ খাদ্য (প্রাকৃতিক খাদ্য) থাকে যা প্রয়োজনের তুলনায় হাঁসের জন্য যথেষ্ট নয়। গবেষণা তথ্য থেকে জানা গেছে যে এক্ষেত্রে প্রতিটি বয়ষ্ক হাঁসকে সকালে-বিকালে মিলে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ গ্রাম সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
১৮২. ধান ক্ষেতে মাছ চাষ বলতে কি বুঝায়?• ধান ক্ষেতে মাছ চাষ বলতে একই ফসলী জমিতে একই ব্যবস্থাপনায় একই সময়ে ধান ও মাছ চাষ করা বুঝায়।
১৮৩. ধান ও মাছের সমন্বিত চাষে কোনটি মূখ্য ও গৌন ফসল?• ধান ক্ষেতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে ধান মূখ্য আর মাছ গৌন ফসল। 

কুচিয়া মাছ চাষ পদ্ধতি

  কুচিয়া মাছ চাষ পদ্ধতি: কুচিয়া মাছ চাষে লাভ, উপকারিতা ও বৈশিষ্ঠ্য সাপের মত দেখতে হলেও কুচিয়া এক প্রকার মাছ। আমাদের দেশে সর্ব সাধারণের কাছে...